রূপক মজুমদার, বর্ধমান
এমনও এক সময় ছিল, যখন রাজবাড়ি থেকে পরিষ্কার দেখা যেত কার্জন গেট। পরে রাজবাড়িতে বসল ঘড়ি। তাও দূর থেকে স্পষ্ট দেখতে পেতেন সাধারণ মানুষ। এখন রাস্তার দু’ধারে উঠেছে বাড়ি। দৃষ্টিতে ধরা পড়ে না কার্জন গেট অথবা ঐতিহ্যবাহী ঘড়ি।
সদাব্যস্ত জিটি রোডের দু’ধারে হয়েছে প্রচুর দোকান। বেড়েছে জনসংখ্যা, বেড়েছে গাড়ি। রাস্তা হয়েছে ছোট, ফুটপাথ হয়েছে দখল।
২০২২ সালে জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেনকে সঙ্গে নিয়ে হকারদের সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলাও এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছিলেন।
কিন্তু কয়েক দিন যাওয়ার পরে ফের এক চিত্র! বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশ বলছিলেন, ‘১৯০৪ সালে কার্জন গেট তৈরি হয়েছিল। ১৯৪০–এ তৈরি হয় রাজবাড়ি। তখন কার্জন গেট থেকে দেখা যেত রাজবাড়ির ঘড়ি। এখন বিধায়ক উদ্যোগ নিয়েছেন সংস্কারের।’
সম্প্রতি বিধানসভায় বিদ্যুৎমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে রাস্তার মধ্যে থাকা ইলেকট্রিক পোল রাস্তার দু’ধারে সরাতে উদ্যোগ নেন বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস। পোল সরানোর কাজ শেষও করে ফেলেছে বিদ্যুৎ দপ্তর। ভাঙা হয়েছে রাস্তার মধ্যে থাকা ক্রংক্রিটের ডিভাইডার।
এ বার হবে রাস্তা সংস্কারের কাজ। বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকারের বক্তব্য, ‘বিসি রোডের সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের জন্য পুরসভা তিন কোটি টাকা খরচ করবে। এই রাস্তা আগামী দিনে শহরের গর্ব হয়ে উঠবে।’
বিসি রোডের ব্যবসায়ী অশোক সাউ বলেন, ‘বিসি রোডের রাস্তায় এখন দু’টো টোটো পাশাপাশি চলতে পারে না। রাস্তার দু’ধারে মোটরবাইক, সাইকেল আর টোটোর স্ট্যান্ড। কী ভাবে মানুষ আসবে?’
অন্য এক ব্যবসায়ী সত্যজিৎ সাহার বক্তব্য, ‘তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড সরে যাওয়ার পরে ব্যবসা শেষ হয়ে গিয়েছে। অনলাইনের দৌলতে ছোট ব্যবসায়ীদের অবস্থা আরও খারাপ। বিসি রোডের যানজট এড়িয়ে মানুষ এখানে আসছেন না।’
বিধায়ক বলছেন, ‘বিসি রোডের এই রাস্তার পুরো সংস্কার করা হচ্ছে। রাস্তার দু’ধারে মোটরবাইক রাখা বন্ধ করা হবে। নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে বাইক রাখার সঙ্গে টোটো চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আনা হবে। ওয়ান ওয়ে–র পরিকল্পনাও রয়েছে।
জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের সঙ্গে কথা বলে কাজ করব। পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে এই রাস্তা দিয়ে দু’টো মিনি বাস চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এটি উল্লাস থেকে কার্জন গেট হয়ে শহরের মধ্যে দিয়ে উদয়পল্লি হয়ে গলসি অবধি যাবে। এতে শহরের ব্যবসায়ীদেরও সুবিধা হবে যেমন তেমনই সাধারণ মানুষও উপকৃত হবে।’