• ৩০ পরিবারের আবাসনে সকলে যেন সকলের আত্মীয়ও হয়ে থাকেন
    এই সময় | ২৬ মে ২০২৫
  • প্রবীর কুণ্ডু

    শুধু ন’শো বা তেরোশো স্কোয়ার ফুটের চার দেওয়ালে মাথা গুঁজে থাকা নয়। এখানকার সাততলা আবাসনের আবাসিকরা উঁচু পাঁচিলের বাইরে বেরিয়ে সামাজিক কাজ করতে ভালোবাসেন। নিজেদের মতো করে অন্য ভাষার আবাসিকদের মধ্যে যেন আত্মীয়তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলেন প্রত্যেকে।

    আবাসনের মধ্যে কারও বিপদ হলে পাশে দাঁড়ানো তো বটেই, সমাজের দুঃস্থদের পাশেও থাকতে ভালোবাসেন এখানকার আবাসিকরা। কোচবিহার শহরে তখনও এত বহুতল আকাশ ঢেকে দেয়নি। বলা যেতে পারে পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে নরনারায়ণ রোডের ধারে এই আবাসন শহরের প্রথম অ্যাপার্টমেন্ট কনসেপ্টের উদাহরণ।

    ২০০৬ সালে তৈরি হওয়া এই আবাসনে ফ্ল্যাটের সংখ্যা ৪৮। প্রায় তিরিশটি পরিবার থাকে আবাসনে। অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি হল, পার্কিং জোন, এমনকী আবাসিকদের শরীরচর্চার জন্য জিমও রয়েছে। আর এখানে যেন বারো মাসে তেরো পার্বণও লেগেই আছে। যে কোনও উৎসবে পাত পেড়ে ভূরিভোজ আর মিলে মিশে খুনসুটিটাই আসল।

    লক্ষ্মী পুজো থেকে সরস্বতী পুজো সবেতেই মাত্রা ছাড়া আনন্দ হয় বাসিন্দাদের। তবে সবচেয়ে হুল্লোড় দুর্গাপুজোয়। পুজোতে আবাসিকরা সকলে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি কেউ প্রতিমা, কেউ আবার খাবার খরচ তো কেউ পুজোর যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নেন নিজেরাই এগিয়ে এসে।

    অবাঙালীরাও শাড়ি-ধুতি-পাঞ্জাবিতে ধুনুচি নাচে মেতে ওঠেন। আবাসনের ছেলেমেয়েরা পড়া বা চাকরির তাগিদে যে যেখানেই থাকুন না কেন, পুজোর ছুটিতে আবাসনে ফিরে আসা মাস্ট। আবাসিক বঙ্কিম ভদ্র বলেন, ‘লক্ষ্মী পুজোর নাড়ু খাওয়া হোক কিংবা দুর্গাপুজোর ভোগের খিচুড়ি, আমরা সকলে মিলে মিশে খাওয়া দাওয়া করে উৎসবে মেতে উঠি।’

    উৎসবের মাঝে বছর ফুরোলে নিউ ইয়ার সেলিব্রেশনও হয় আবাসনে। শুধু আনন্দে নয়, আবাসিকদের কারও কোনও বিপদেও একে অন্যের পাশে থাকেন আবাসিকরা। এই আবাসনের বাসিন্দা লেখিকা চৈতালি ধরিত্রীকন্যা।

    তিনি বলেন, ‘আমার আজও মনে পড়ে কয়েক বছর আগেও আবাসনে একা ছিলাম। শ্বাসকষ্টে ভুগছিলাম। সে সময়ে আবাসিকরা এসে আমায় হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। সেদিনের কথা আমার আজও মনে আছে। সকলে আমরা অপরিচিত ছিলাম। তবে সবাই যেন আত্মীয় হয়ে উঠেছি। পুজোয় আমরা দুঃস্থদের মধ্যে খাবার ও নতুন পোশাক তুলে দিই। পুজোয় দর্শনার্থীদের প্রতিমা দর্শনের সময়ে আমরা মহিলারা জলের বোতল তুলে দিই। শীতে গরম কাপড় তুলে দেওয়া হয়।’

    আবাসনের সম্পাদক অজয় গুপ্তা বলেন, ‘বিভিন্ন ভাষাভাষির সকলে আমরা আবাসনে মিলে মিশে থাকি। সারাবছর সামাজিক কাজ বা উৎসবে একসঙ্গে থাকা নয়, কারও বিপদেও একসঙ্গে পাশে থাকি।’

  • Link to this news (এই সময়)