• ক্রিয়েটিনিনে লাগাম দিতে না-মানুষের ডায়ালিসিস, কলকাতায় নজিরবিহীন চিকিৎসা
    প্রতিদিন | ২৬ মে ২০২৫
  • অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: হিমোগ্লোবিন নেমে এসেছিল চারে। ক্রিয়েটিনিন পৌঁছে গিয়েছিল চোদ্দোর ঘরে। ১০-১২ দিন ধরে কালো পায়খানা ও কালো বমি। নেতিয়ে পড়েছিল মেয়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে রক্ত দিতে হয়। কিন্তু তাতে হিমোগ্লোবিন বাড়লেও তৈরি হয় অন্য সমস্যা। লাগামছাড়া হয়ে যায় ক্রিয়েটিনিন। পৌঁছে যায় আঠেরোর ঘরে। ফলে ডায়ালিসিস ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না।

    কিন্তু কোথায় হবে ডায়ালিসিস?
    মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে বেড়িয়েছেন উলুবেড়িয়ার বাউড়িয়ার প্রিন্স ত্রিপাঠী। সমস্যা অন্যত্র। মেয়ে যে না-মানুষ, চারপেয়ে। ল্যাব্রাডর প্রজাতির সারমেয়। নাম কোকো। কলকাতার অনেক হাসপাতাল ঘুরেও ডায়ালিসিস করানো যায়নি কোকোর। অবশেষে দক্ষিণ শহরতলির বাঘাযতীন রিজেন্ট এস্টেটের একটি বেসরকারি পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ‘পসওয়েল পেট ক্লিনিক-এর মধ্যস্থতায় দেশপ্রিয় পার্কের এএইচপিএল-এ ৮ বছর বয়সি কোকোর ডায়ালিসিস হয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ৭ মিনিট ধরে ডায়ালিসিসের পরে কোকোর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়।

    ক্রিয়েটিনিন নেমে আসে পনেরোর ঘরে। কিডনির স্বাস্থ্য ফেরাতে, রক্তে সংক্রমণ কমাতে আজ, সোমবার ফের ডায়ালিসিস হয়েছে কোকোর। পূর্ব ভারতের কোনও বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে এই প্রথম সারমেয়র ডায়ালিসিস হল। কোকোর অভিভাবক প্রিন্স ত্রিপাঠী রবিবার জানিয়েছিলেনন, “ডায়ালিসিসের ফলে কোকোর ক্রিয়েটিনিন ১৮ থেকে কমে ১৫ হয়েছে। সোমবার ডায়ালিসিস হলে এটা আরও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে। আর ক্রিয়েটিনিন কমে গেলে কোকোর রক্তে সংক্রমণের মাত্রা অনেকটাই কমে যাবে।”

    জানা গিয়েছে, কোকোর জরায়ুতে ভয়ঙ্কর সংক্রমণ বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলে পায়োমেট্রা। বাঁচাতে গেলে অস্ত্রোপচারই একমাত্র পথ। বাদ দিতে হবে জরায়ু। কিন্তু তার জন্য তো ক্রিয়েটিনিন কমিয়ে মেয়েকে স্থিতিশীল করতে হবে। এখনও দুশ্চিন্তায় প্রিন্স। প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে বুধবার থেকে হাসপাতালেই রয়েছেন। জানালেন, রবিবার স্থানীয় এক পশু চিকিৎসকের পরামর্শে পসওয়েল পেট ক্লিনিকে কোকোকে নিয়ে আসেন তিনি। প্রথম দু’দিন গাড়িতে করে যাতায়াত করছিলেন। কিন্তু, পরে পরিস্থিতির চাপে কোকোকে নিয়ে ক্লিনিকেই থেকে যান।

    ডা. শৈবাল দাস ও ডা. কৌস্তভ বসুর অধীনে শুরু হয় চিকিৎসা। তারপরই পরিস্থিতি ডায়ালিসিসের দিকে এগোতে থাকে। প্রিন্স বলেন, “ওর শরীরের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, ডায়ালিসিস না করা গেলে বাঁচানো যেত না। ওকে চিকিৎসার জন্য দিল্লি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু ডাক্তারবাবুরা দেশপ্রিয় পার্কেই ব্যবস্থা করে দিলেন।” তবে, প্রিন্স কলকাতার সরকারি পরিসরে পশু চিকিৎসার পরিকাঠামোর অপ্রতুলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। জানিয়েছেন, “ওর চিকিৎসার জন্য আমি কলকাতার রাস্তায় একের পর এক হাসপাতালে গাড়ি নিয়ে ঘুরেছি। বেলগাছিয়ায় সরকারি পশু হাসপাতালে ডায়ালিসিসের জন্য গিয়েছিলাম। ওখানে ডায়ালিসিসের যন্ত্র খারাপ।” এএইচপিএল-এর কর্ণধার প্রতীপ চক্রবর্তী জানান, পূর্ব ভারতে এই প্রথম দক্ষ টেকনিসিয়ানদের তত্বাবধানে কোনও বেসরকারি হাসপাতালের তরফে পোষ্যের ডায়ালিসিস করা হল। ডায়ালিসিসের পর কোকোর সংক্রমণ কমে গেলে অস্ত্রোপচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
  • Link to this news (প্রতিদিন)