• অপরাধ দমনে ভরসা বাড়াচ্ছে সারমেয় বাহিনী, আরও এক ডজন কুকুর কিনতে চলেছে লালবাজার
    প্রতিদিন | ২৬ মে ২০২৫
  • অর্ণব আইচ: সারমেয় বাহিনীতে ভরসা কলকাতা পুলিশের। তাই ডগ স্কোয়াডের জন‌্য আরও এক ডজন কুকুর নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিল লালবাজার। তাদের ছোট থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে রীতিমতো গোয়েন্দা কুকুরে ‘পরিণত’ করা হবে। তাদের পাঠানো হবে গুরুত্বপূর্ণ ডিউটিতে।

    লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, এখন কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াডে রয়েছে ৪১টি সারমেয়। কিন্তু এখনও ডগ স্কোয়াডে রয়েছে শূন‌্যপদও। এবার সেই পদগুলি ভর্তি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। এ ছাড়াও নবান্নের জন‌্য আলাদা একটি নতুন ডগ স্কোয়াড তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে লালবাজার। তবে আপাতত ডগ স্কোয়াডে ১২টি নতুন সারমেয় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, পাঁচটি বিভিন্ন ব্রিডের সারমেয় নিয়ে আসার উপরই জোর দেওয়া হয়েছে। ব্রিডগুলি হচ্ছে ককার স্প‌্যানিয়েল, ল‌্যাবরেডর রিট্রিভার, জার্মান শেফার্ড, গোল্ডেন রিট্রিভার ও বিগল। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ও খুনি ধরার জন‌্য ‘ট্র‌্যাকার ডগ’ হিসাবেই তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর জন‌্য প্রাথমিকভাবে ল‌্যাবরেডর রিট্রিভার, জার্মান শেফার্ড ও গোল্ডেন রিট্রিভারের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

    কারণ, এখনও এই ব্রিডের কুকুরগুলিকেই ট্র‌্যাকার ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হিসাবে ব‌্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা দেখেছেন যে, তুলনামূলক মাপে ছোট ককার স্প‌্যানিয়েল ও বিগল ব্রিডের কুকুরকে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হিসাবেও কাজে লাগানো যায়। কারণ, কোনও গাড়ির তলা অথবা অপরিসর জায়গায় বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখা আছে কি না, এই দুই ব্রিডের কুকুর সহজেই তার হদিশ দিতে পারে। আবার মাস কয়েক আগেই ‘মন্ত্র’ নামে একটি ককার স্প‌্যানিয়েল ব্রিডের কুকুর প্রশিক্ষণ নিয়ে কলকাতায় এসেছে। সেটিকে ‘রেসকিউ ডগ’ হিসাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। বিপর্যয় বা বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রে ছোট জায়গা বা ফাটলের মধ্যে দিয়ে ভিতরে ঢুকে আটকে থাকা কোনও ব‌্যক্তির সন্ধান গিতে পারে এই ধরনের সারমেয়। প্রয়োজনে ‘রেসকিউ’ বা উদ্ধারকাজেও লাগানো হতে পারে এই ব্রিডের কুকুরকে।

    লালবাজারের মতে, পরের বছরই বিধানসভা ভোট। তার আগে কলকাতায় লেগেই থাকবে ভিআইপি ও ভিভিআইপিদের আনাগোনা। শহরের বিভিন্ন জায়গায় হবে জনসভা। তার আগে নাশকতা বিরোধী পরীক্ষার জন‌্য সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে পুলিশ সারমেয়দের। যাতে ডগ স্কোয়াডের সদস‌্যদের উপর চাপ না বাড়ে, তার জন‌্য এখন থেকেই নতুন ১২ সদস‌্যকে নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিয়ে আসা হচ্ছে। এর ফলে এর মধ্যে চিকিৎসকের পরামর্শে কোনও সারমেয় অবসরগ্রহণ করলেও কোনও সমস‌্যা হবে না। লালবাজার জানিয়েছে, ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে শাবক ‘নিয়োগ’করা হবে। কলকাতা ছাড়াও চণ্ডীগড় বা হরিয়ানার কুকুর বিক্রেতাদের কাছ থেকেও কেনা হতে পারে কুকুর। এর আগে চণ্ডীগড়ের এক ব্রিডারের কাছ থেকে উন্নতমানের কুকুর কেনা হয়েছিল। তারা এখন ডিউটিও করছে।

    তবে কোনও কুকুর কেনার ৬ মাসের মধ্যে যদি সে দুরারোগ‌্য ব‌্যাধিতে আক্রান্ত হয় অথবা তার মৃত্যু হয়, তবে তার বদলে আরও একটি সারমেয় ব্রিডার পুলিশকে দেবে। আবার অনেক সময় অনেক সহৃদয় ব‌্যক্তি কলকাতা পুলিশকে কুকুর শাবক দানও করেন। যদিও প্রত্যেকটি শাবকের পরীক্ষা নেন পশু চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা তার দাঁতের জোর, দৌড়নোর ক্ষমতা, প্রাথমিক বুদ্ধিমত্তা, কর্মক্ষম কি না, তা পরীক্ষা করে তবেই তাকে পুলিশে নিয়োগ করবেন। পুলিশের হ‌্যান্ডলাররা এই বারোটি সারমেয় শাবককে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেবেন। তার পর তাদের ইন্দো টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
  • Link to this news (প্রতিদিন)