• বেসরকারি সংস্থায় নিয়োগে ‘রাজনৈতিক সুপারিশ’ নিষিদ্ধ, নেতাদের নির্দেশ তৃণমূলের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ মে ২০২৫
  • বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। একদিকে উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে পাল্টা লড়াই দেওয়ার ডাক দিয়েছে বাম, কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিজেপিও। বিগত কয়েক বছরে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসকে। ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতির দায় এসে পড়েছে রাজ্য সরকারের উপর। আর তাই নির্বাচনের আগে কোনও বিতর্কে জড়াতে নারাজ তৃণমূল হাইকমান্ড। সেই কারণেই দলের নেতাদের বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল।

    দলের মূল সংগঠন তো বটেই, শাখা সংগঠনের প্রধানদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বেসরকারি কোনও সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে দলের নাম ভাঙিয়ে কোনও সুপারিশ করা যাবে না। অতীতে বহুবার এই জাতীয় ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এমন ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি যে কলুষিত হয়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সেই কারণে ভোটের আগে মেপে পা ফেলতে চায় রাজ্যের শাসকদল। দলীয় শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও নেতার বিরুদ্ধে যদি ওই বিষয়ে কোনও অভিযোগ ওঠে এবং তা প্রমাণিত হয়, তা হলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। কোনও ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতির দায় আর রাজ্য সরকার বা দল নেবে না।

    শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঘটনায় তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখনও কারাবাসে। পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য এবং বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহাও নিয়োগ কেলেঙ্কারি মামলায় দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন। সদ্যপ্রয়াত তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার নামও শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিরোধীরা ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতিকে ইস্যু করে শাসক তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছিল। সেই কারণেই এবার দলের নেতাদের কড়া নির্দেশ দিল জোড়াফুল শিবির।

    গত ১৪ বছরের শাসনকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার এসেছে। গ্রামীণ এলাকা থেকে শুরু শহরেও ঢেলে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পে দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলা। বিনিয়োগের অত্যতম গন্তব্যে পরিণত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, সবুজসাথীর মতো বিভিন্ন প্রকল্প আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতি পেয়েছে। তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘কেন্দ্রের বঞ্চনা সত্ত্বেও উন্নয়নের নিরিখে গোটা দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলা। দু-একজন নেতার নামে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দলের ভাবমূর্তি কিছুটা ক্ষুন্ন হয়েছে। সেই কারণেই এবার নেতাদের উদ্দেশে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

    বেসরকারি সংস্থাগুলির পাশাপাশি পুরসভাগুলিকেও ওই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হচ্ছে। কোন পুরসভা কোন ঠিকাদারি সংস্থাকে কাজে নিয়োগ করবে, তা-ও দলের নেতা, মেয়র, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত প্রশাসনের নির্বাচিত কোনও জনপ্রতিনিধি সুপারিশ করতে পারবেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, কোনও ঠিকাদারি সংস্থা রাস্তা সারাই বা কোনও বিভাগে কাজের দায়িত্ব পেয়েছে। অথচ দলের নেতারা সেখানে মাতব্বরি করে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে দিয়েছেন। প্রভাব খাটিয়ে একাধিক কর্মীকে কাজে ঢোকানোরও অভিযোগ উঠেছে নেতাদের বিরুদ্ধে। সূত্রের খবর, এই জাতীয় অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই কড়া নির্দেশ দিয়ে সব ধরনের নিয়োগ থেকে দলীয় নেতাদের দূরে থাকতে বলা হয়েছে।

    রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, শাসক শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে নিয়োগ দুর্নীতিকে বিরোধীরা ‘হাতিয়ার’ করবে। তাই এখন থেকেই দলীয় নেতাদের যাবতীয় নিয়োগ থেকে দূরে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, বৃহত্তর কলকাতার কয়েকটি শিল্পাঞ্চল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ যায়, শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের একাংশ তাঁদের মর্জিমাফিক লোক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন কলকারখানায় জোরাজুরি করছেন। এরপর তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী মারফত শ্রমিক সংগঠনের সংশ্লিষ্ট নেতাদের সর্তক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাদের বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হল।

    তৃণমূলের এক শাখা সংগঠনের প্রধানের কথায়, ‘দলের কোনও স্তরের নেতাই এ বার কোনও ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে দাদাগিরি ফলাতে পারবেন না। কোনও নেতার বিরুদ্ধে যদি ওই বিষয়ে কোনও অভিযোগ ওঠে এবং তা প্রমাণিত হয়, তা হলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে। কোনও ব্যক্তিবিশেষের দুর্নীতির দায় আর রাজ্য সরকার বা দল নেবে না।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)