• তরুণীর পেট ছেয়ে গিয়েছিল জল ভরা ছোট বেলুনের মতো সিস্টে, বিরল অস্ত্রোপচারে বড় সাফল্য বর্ধমান মেডিক্যালের
    এই সময় | ২৭ মে ২০২৫
  • প্রায় চার ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে আঠারো বছরের তরুণীর পেট থেকে বের করা হলো সিস্ট। তবে তা অতি চেনা সিস্ট নয়। তা দেখতে অনেকটা জল ভরা ছোট বেলুনের মতো। অত্যন্ত ঝুঁকির অস্ত্রোপচার। চ্যালেঞ্জ ছিল প্রতি মুহূর্তে। প্রথম বার এই অস্ত্রোপচার হলো বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। নিঃসন্দেহে এ ধরনের সাফল্য ভরসা বাড়ায় সরকারি হাসপাতালের পরিষেবার উপর।

    বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, গত তিন মাস ধরে সামান্য কিছু খেলেই পেট ভরে যাচ্ছিল ওই তরুণীর। ক্রমেই ওজন কমতে থাকে শরীরের, তবে ফুলতে থাকে পেট। ২ মে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে আসেন তিনি। সেখানে পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা যায়, পেটের ভিতর অসংখ্য তরলপূর্ণ বেলুনের মতো সিস্ট ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

    হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক এনসি কর্মকারের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করা হয়। কী ভাবে এই চিকিৎসা সম্ভব, কী ভাবেই বা অস্ত্রোপচার করা হবে, সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ডাক্তাররা। শল্য চিকিৎসা ও অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞরা দফায় দফায় আলোচনা করেন। এর পরই ১৪ মে এই অস্ত্রোপচার হয়। প্রায় হাজারের মতো তরলপূর্ণ সিস্ট বের করে আনা হয় ওই তরুণীর পেট থেকে।

    বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার তাপস ঘোষ জানান, এই সিস্টের নাম ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল হাইডাটিড সিস্ট (Intraperitoneal hydatid cysts)। তাঁর কথায়, ‘এই সার্জারি খুবই বিরল। আমাদের হাসপাতালের ইতিহাসে তো প্রথম বার বটেই, রাজ্যেও খুব কম এই ধরনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। এই রোগ মাংস বা স্যালাড থেকে হয়। মূলত হাইজিন না মানলে এই সিস্ট হতে পারে।’

    হাসপাতালের জেনারেল সার্জন নাজমুস সাদত জমাদার জানান, ইন্ট্রাপেরিটোনিয়াল হাইডাটিড সিস্ট হয়ত খুব বিরল নয়। লিভার বা ফুসফুসে অনেক সময়ই এই রোগ দেখা দেয়। তবে পেটে পেরিটোনিয়ামে খুব একটা শোনা যায় না। এই সিস্ট পেটের ভিতর ফেটে গেলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এই রোগীর বয়স কম। ফলে অনেক দিক খেয়াল রেখে এই অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

    চিকিৎসকেরা জানান, এই অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে অ্যানেসথেশিয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফলে হাসপাতালের এই বিভাগের চিকিৎসকদের জন্যও তা খুব বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সব থেকে জরুরি কথা, এই অস্ত্রোপচার খুবই সাবধানে করতে হয়। কারণ, একটি তরলভর্তি সিস্ট ফেটে গেলেই, তা থেকে আবারও এই সিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল তা সাফল্যের সঙ্গেই করেছে বলে জানান ডাক্তাররা।

  • Link to this news (এই সময়)