সৌম্য দে সরকার, মালদহ: জেলা পুলিসের জালে ধরা পড়ে এখন জল থেকে ডাঙায় তোলা মাছের মতোই খাবি খাওয়া অবস্থা একের পর এক সোনার দোকান লুট গ্যাংয়ের মূলচক্রী লালু সাহানির। যে কোনওভাবে জেলের বাইরে বেরতে মরিয়া এই কুখ্যাত অপরাধী সম্প্রতি অনশন করে পুলিসের উপর চাপ তৈরির চেষ্টা শুরু করেছিল। তবে জেল এবং পুলিস লকআপে অনশন করে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে লালুর এই ব্ল্যাকমেলের কায়দা বৃথা গিয়েছে। বরং আইনের পথেই সোনা লুটের এই কুখ্যাত গ্যাংস্টারকে জেলের কুঠুরিতে দীর্ঘমেয়াদে বন্দি করে রাখতে সক্রিয় হয়েছে পুলিস।
মালদহের পুলিস সুপার প্রদীপ কুমার যাদবের কথায়, লালু সাহানির মতো আন্তঃরাজ্য অপরাধ জগতের এক পান্ডাকে হেফাজতে পাওয়া পুলিসের কাছে হাতে চাঁদ পাওয়ার মতোই সাফল্য। ১১ মার্চ লালুকে হাতে পায় মালদহ পুলিস। তারপর থেকেই কখনও পুলিস লকআপে আবার কখনও চাঁচল বা মালদহ সংশোধনাগারে বন্দি এই কুখ্যাত অপরাধী। সম্প্রতি মালদহ পুলিসের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য জেলেই অনশন শুরু করেছিল সে। পরে আইনি পদ্ধতিতে ফের লালুকে পুলিস হেফাজতে নেওয়া হয়। সেখানেও অনশনে অনড় থাকে লালু। আসলে তার উদ্দেশ্য ছিল পুলিসকে ব্ল্যাকমেল করে বন্দিদশা থেকে নিস্তার পাওয়া। কিন্তু পুলিস তাকে আটকে রাখতে অনড়, সেকথা বুঝে ফের খাওয়াদাওয়া শুরু করেছে সে।
পুলিস সুপার বলেন, লালুর একের পর এক অপরাধের কালো ইতিহাস রয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে থাকা অপরাধের সালতামামি পেয়েছি। আইনি পথে লালুকে আটকে রাখার জন্য সব রকম পদক্ষেপ করছে পুলিস।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, আদতে বিহারের কাটিহার জেলার বাসিন্দা লালুর কিশোর বয়সে অপরাধে হাতেখড়ি। ২০১৩ সালে সে এরাজ্য পুলিসের হাতে একবার গ্রেপ্তারও হয়। ছাড়া পেয়ে বিহারের কিষাণগঞ্জের মৌলবী গ্যাংয়ে যোগ দেয়। সেই ওই গ্যাংয়ের অন্যতম অপারেটর ছিল। পরে মৌলবী গ্রেপ্তার হলে নিজেই গ্যাং তৈরি করে লালু। শুরু করে ডাকাতি। পরে মতবিরোধ হলে নতুন গ্যাংয়ে তার অন্যতম সহযোগীকেও গুলি করে খুন করে। এরপর থেকে বিহার থেকে ঝাড়খণ্ড এবং সুযোগ বুঝে এরাজ্যের কোনও কোনও জায়গায় হানা দিতে শুরু করে লালুর গ্যাং। পরে বিহার পুলিসের তাড়া খেয়ে এবং পশ্চিমবঙ্গের পুলিস গ্রেপ্তার করতে হন্যে হয়ে ওঠায় লালু ঝাড়খণ্ডে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেয়। লালুকে ঘিরে থাকত একদল সশস্ত্র রক্ষী। প্রয়োজনে বেপরোয়া গুলি চালাতেও দক্ষ ছিল লালু ও তার গ্যাং। লালু টার্গেট করত ব্র্যান্ডেড সোনার দোকানগুলি। যাতে একলপ্তে বিপুল পরিমাণ সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান পাথর হাতিয়ে নেওয়া যায়। অপরাধ জগতের এমনই এক বেতাজ বাদশাকে দীর্ঘ সময় জেলে আটকে রেখে তার নেটওয়ার্কের পাশাপাশি মনের জোর ভেঙে দেওয়াই এখন লক্ষ্য পুলিসের।