• কালিয়াচকে শ্যুটআউট, জখম যুবক
    বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ ও সংবাদদাতা, কালিয়াচক: আবার শিরোনামে মোজামপুর! নেপথ্যে এলাকার দখল নিতে দুষ্কৃতীদের গ্যাং ওয়ার। রবিবার রাতে নিজের লিচু বাগান পাহারা দিচ্ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা করিম খান। তাঁর গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তদন্তে নেমে এমনই অনুমান পুলিসের। ইতিমধ্যেই পুলিস দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিসের ধারণা, ওই এলাকায় ব্রাউন সুগার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অসামাজিক কারবার নিয়ন্ত্রণ করা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর চাপা লড়াই শুরু হয়েছে। যা এখন রক্তক্ষয়ী আকার নিয়েছে।

    পুলিস সুপার প্রদীপ কুমার যাদব সোমবার বলেন, আমরা দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছি। গুলিবিদ্ধ যুবকের স্ত্রীর করা এফআইআরের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ঘটনার সমস্ত দিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। 

    পুলিস সূত্রে খবর, রবিবার রাতে করিম তাঁর লিচু বাগান পাহারা দিচ্ছিলেন। রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটা থেকে বারোটা নাগাদ হঠাৎই গুলির আওয়াজ শোনা যায়। লিচু বাগানের ভিতর থেকে ভেসে আসে করিমের আর্তনাদ। তাঁর চিৎকার শুনে স্থানীয় বেশ কয়েকজন মানুষ সেখানে ছুটে যান। তাঁরা দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন করিম। খবর দেওয়া হয় বাড়িতে। গুরুতর জখম অবস্থায় স্থানীয় বাসিন্দারা করিমকে উদ্ধার করে নিয়ে যান মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। রাতেই অস্ত্রোপচার করে করিমের পেট থেকে গুলি বের করা হয়েছে। আপাতত মেডিক্যালে সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তিনি। এখনও বিপদমুক্ত নন করিম। 

    পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে,করিমের স্ত্রী আনজুমা খাতুনের দায়ের করা এফআইআরের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নামে কালিয়াচক থানার পুলিস। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশেদ আলি এবং মহম্মদ হামিদুল সেখ নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতরা কালিয়াচক থানা এলাকার হারুচকের বাসিন্দা। তাঁরা বাবা ও ছেলে। 

    লিচুবাগানে গুলিকাণ্ডের তদন্তে নেমে মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে গুলিবিদ্ধ যুবক ও পরিবারের বয়ান নেয় পুলিস। প্রাথমিক তদন্ত করে পুলিস মনে করছে,এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমালের সূত্রপাত। সেখান থেকেই এই গুলি চালানোর ঘটনা।

    মাদক পাচারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে কালিয়াচক। সঙ্গে চোরাচালানও বাড়ছে দিন দিন। অপরাধপ্রবণ এই মোজামপুরে নিজেদের রাজ কায়েম করার  জন্য দুষ্কৃতীরা বরাবরই দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত। মাঝে এখানকার কিছু দুষ্কৃতী পুলিসের জালে ধরা পড়ে। অনেকে গ্রেপ্তার হয় এনআইএ এর হাতে। ফলে কিছুদিন এখানে দুষ্কৃতীদের দাপট তুলনামূলক কম ছিল। তদন্তকারীদের অনুমান,কারবারের এলাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দুষ্কৃতীদের গোষ্ঠীকোন্দল ফের মাথাচাড়া দিয়েছে। মালদহ জেলার অশান্তিপ্রবণ এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম হল মোজামপুর। বাম জমানা থেকেই এই এলাকা অশান্ত ছিল। জলাশয় দখল, বিড়ির কারবার, মাদক পাচার, সীমান্তে চোরাচালান নিয়ে বারবার এই এলাকা অপরাধ প্রবণ হয়ে ওঠে। যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দুষ্কৃতীরা একাধিক গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে যায়। এলাকা দখল নিয় তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন গ্যাং ওয়ার চলেছে। এখনও সেই গোষ্ঠীগুলিকে নির্মূল করতে  পারেনি পুলিস। তবে, লাগাতার নজরদারি চালিয়ে পুলিস গোষ্ঠীর সদস্যদের ধরপাকড় করে গ্যাং নির্মূল করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। - জখমের বাড়িতে ভিড়। নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)