• ব্রেনস্ট্রোকে থ্রম্বোসিসের চিকিৎসায় সাফল্য, তিনবছরে সুস্থ ৩৫ রোগী
    বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কোচবিহার: ব্রেনস্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার চিকিৎসায় (ইসকিমিক সিভিএ) ভালো সাড়া পাচ্ছে কোচবিহারের এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ। থ্রম্বোলাইসিস চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করে থ্রম্বোসিস নামে এই অসুখের চিকিৎসা করা হয়। রোগীকে সময়মতো মেডিক্যাল কলেজে এলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সুস্থ হয়ে উঠছে। রবিবার মেডিক্যাল কলেজে দু’জন রোগীকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ভালো আছেন বলে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। 

    গত তিনবছরে প্রায় ৩৫জন রোগী মস্তিস্কে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা নিয়ে মেডিক্যাল কলেজে এসেছেন। তাঁদের অধিকাংশই সুস্থ হয়েছেন। যাঁরা চিকিৎসায় যারা সাড়া দেননি তাঁদের অনেককে পক্ষাঘাতের স্বীকার হতে হয়েছে। ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা সরকারি মেডিক্যাল কলেজে হওয়ায় রোগীর পরিজনদের খরচ নিয়ে ভাবতে হয়নি। যারা সাড়া দিয়েছেন সেই রোগীও সুস্থ হয়ে উঠছেন। 

    তবে চিকিৎসকদের দাবি, স্ট্রোক হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে এলে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকে। দেরি করে বা অন্যান্য চিকিৎসা, ঝাড়ফুঁক এসব করে সবশেষে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসায় তেমন সাড়া নাও মিলতে পারে।

    এই ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ফাল্গুনি দাস বলেন, মস্তিষ্কের শিরায় রক্ত জমে গেলে তাকে থ্রম্বসিস বলা হয়। থ্রম্বলাইসিস পদ্ধতিতে তাঁদের চিকিৎসা করা হয়। একেই ইসকিমিক সিভিএ বলা হয়। ১০০রোগীর মধ্যে প্রায় ৬০জন এই চিকিৎসায় ভালো হয়ে যান। ৩০জনের খুব বেশী কিছু উন্নতি হয় না। কিছু সংখ্যকের অবস্থার অবনতি হতে পারে। এই চিকিৎসা কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে চলছে। নির্দিষ্ট ওষুধ দেওয়া হয়। এতে রোগীর থেকে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। কোচবিহারে একমাত্র মেডিক্যাল কলেজেই এই চিকিৎসা হয়।

    এমএসভিপি ডা:সৌরদীপ রায় বলেন, ইসকিমিক স্ট্রোকের ঘটনায় রোগীকে অন্তত চারঘণ্টার নিয়ে এলে ওষুধ দিয়ে রক্ত জমাটের সমস্যা নিরাময় করা সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে প্যারালাইসিস আটকানো যায়। রোগী এলে সবার আগে সিটিস্ক্যান করতে পাঠানো হয়। তারপর সিসিইউতে ভর্তি করে চিকিৎসা চলে। এই চিকিৎসা কোচবিহারে অন্য কোনও জায়গায় হয় না। রোগীকে সেক্ষেত্রে কোচবিহারের বাইরে নিয়ে যেতে হয়। যা অনেকটাই ব্যয় বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। তাই এই ধরনের সমস্যায় দ্রুত যোগাযোগ করে রোগীকে মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসতে হবে।

    কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে একের পর আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার ক্ষেত্রেও পরিষেবা অত্যাধুনিক হয়েছে। ট্রমাকেয়ার ইউনিট, সিসিইউ ইউনিট চালু, সিটি স্ক্যান, এমআরআই সহ নানা পরীক্ষা এখানে রয়েছে। তারই মধ্যে এই ইসকিমিক স্ট্রোকের চিকিৎসা চালুর পর থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। অনেক সময়ই দেখা যায়, গ্রামগঞ্জের বহু মানুষের ব্রেনস্ট্রোক হয়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না করানোয় তারা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন। এখন সময়মতো মেডিক্যাল কলেজে আসলে সেই সমস্যা হবে না বলেই আশ্বস্ত করছেন চিকিত্সকরা। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)