দিনমজুর থেকে রাতারাতি ডেকরেটর্স ব্যবসায়ী, বদলে যায় ধৃত বিজেপি নেতার আর্থিক অবস্থা
বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: মাত্র দু’ বছরে দিনমজুর থেকে ডেকরেটিং ব্যবসায়ী। একচিলতে মাটির বাড়ি থেকে টাইলস বসানো পাকা বাড়ি। ছোট হাতি গাড়ির মালিক। কলকাতায় এসটিএফের হাতে কার্তুজ সহ গ্রেপ্তার হওয়া রামকৃষ্ণ মাঝির গল্পের মতো উত্থান এখন স্থানীয়দের চর্চার বিষয়।
রবিবার কলকাতার ধর্মতলার বাস স্ট্যান্ড থেকে ৮ এমএম পিস্তলের ১২০টি কার্তুজ সহ এসটিএফের হাতে ধরা পড়ে কেতুগ্রামের বিজেপি নেতা রামকৃষ্ণ মাঝি। জেরায় সে স্বীকার করেছে, উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরের ঘোলা থেকে ধর্মতলায় এসেছিল। সেখান থেকে মেচেদা যাওয়ার জন্য দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণের একটি সরকারি বাসের টিকিট কাটে। কিন্তু অত কার্তুজ সে কাকে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল এসটিএফ এখন সেটাই জানতে চেষ্টা করছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কেতুগ্রামের পাণ্ডুগ্রাম অঞ্চলের কুলুন গ্রামের বাসিন্দা রামকৃষ্ণ কয়েক বছর ধরেই বিজেপি করে। তার বাবা বাপি মাঝি ও মা বন্দনাদেবী সাত বছর ধরে বেলুড়ের বাসিন্দা। সেখানে রামকৃষ্ণর বাবা রং মিস্ত্রির কাজ করেন। রামকৃষ্ণ তার স্ত্রী সোমাকে নিয়ে পৈতৃক বাড়িতেই থাকে। সেখানেই তার কাকা ঈশান মাঝিও থাকেন। বিজেপির একাধিক রাজ্য নেতা-নেত্রীর সঙ্গে রামকৃষ্ণকে মিটিং, মিছিলে যেতে দেখেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরাই জানান, রামকৃষ্ণ এক সময় দিনমজুরি করত। বিজেপিতে নাম লেখানোর পর থেকেই তার ঠাঁটবাট বদলে যায়। মাটির বাড়ি থেকে টাইলস বসানো পাকা বাড়ি, গাড়ির মালিক হয়। ডেকোরেটিংয়ের ব্যবসা শুরু করে। সামান্য দিনমজুরের হঠাৎ এই উত্থান দেখে প্রতিবেশীরা অবাক হয়ে যান।
সোমবার রামকৃষ্ণের স্ত্রী সোমা বলেন, এদিন ভোরে আমার স্বামী কলকাতায় বেরিয়ে গিয়েছিল। রাতে লালবাজার থেকে স্বামীর গ্রেপ্তারির খবর পাই। গাড়ির কাজ করানোর জন্য ওর পাঁচ হাজার টাকার খুব দরকার ছিল। জানি না, টাকার লোভে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ল কি না। ধৃতের কাকা ঈশান বলেন, ভাইপোকে কোনওদিন আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার করতে দেখিনি।
পাণ্ডুগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি লক্ষণ মণ্ডল অবশ্য অন্য কথা বলছেন। তিনি বলেন, রামকৃষ্ণ বিজেপির দাপুটে নেতা। ভোটের সময়ে আমাদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভয় দেখাত। ওর গাড়ি করে হাওড়া, লিলুয়া এসব জায়গায় যেত। সেখানে হয়তো আগ্নেয়াস্ত্র কারবার চালাত। তা না হলে সামান্য দিনমজুর থেকে বাড়ি, গাড়ির মালিক হল কীভাবে। আমরা এর আগেও পুলিসকে ওর বিষয়ে জানিয়েছিলাম। বিজেপি ভোটের আগে আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করে শান্ত কেতুগ্রামকে অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছিল।
পালটা কেতুগ্রামের ৪ নম্বর মণ্ডলের বিজেপির সভাপতি সদন হাজরা বলেন, রামকৃষ্ণ বিজেপির কোনও পদে নেই। আমাদের নতুন কমিটিই তৈরি হয়নি এখনও। ভোটের সময়ে ওর ছোট হাতি ভাড়া নিয়েছিলাম আমরা। এবার কেউ যদি মিটিং মিছিলে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে ছবি তোলে তার দায় বিজেপি কেন নেবে।
গত ৩০ মার্চ কলকাতায় প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র সহ ময়না মাঝি ও তার এক সঙ্গী এসটিএফের হাতে ধরা পড়ে। সেই ময়নার বাড়িও কেতুগ্রামে। সাধারণ বধূ থেকে ময়না আগ্নেয়াস্ত্র পাচারে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছিল। এখন রামকৃষ্ণ কীভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের কারবারে জড়িয়ে পড়ল তা জানতে চাইছে কেতুগ্রাম থানার পুলিস। কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ বলেন, রামকৃষ্ণ ৪৬ নম্বর জেডপি-এর বিজেপির এসসি মোর্চার সভাপতি। আমাদের কাছে তার প্রমাণ রয়েছে। বিজেপি এসব কার্তুজ আমদানি করে কেতুগ্রামে হয়তো কোনও দাঙ্গা লাগাবার চক্রান্ত করছিল। ওর অনুগামীদের কাছেও আগ্নেয়াস্ত্র থাকতে পারে। আমরা পুলিসকে সব জানাব। বিজেপি দেখুক ওরা কাদের প্রশ্রয় দেয়। গত লোকসভার বিজেপির প্রার্থীর সঙ্গে রামকৃষ্ণকে ঘুরতে দেখা গিয়েছে। তার ছবিও আমাদের কাছে রয়েছে।