• ইউনুসের বাংলাদেশে ব্রাত্য জাতীয় কবি নজরুলও! চুরুলিয়ায় কবির জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠান, এলেন না বাংলাদেশের কোনও প্রতিনিধি
    বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। তিনি যেন দুই বাংলার সংস্কৃতির সেতু। কবির জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে সেদেশে। বাংলাদেশে যখন সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ বিরাজ করত, তখন ময়মনসিংহে গড়ে ওঠে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। কবির জন্মজয়ন্তীতে চুরুলিয়ায় আসতেন বহু শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি। গতবছরও চুরুলিয়ার নজরুল মেলায় গান গেয়েছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পী ফেরদৌস আরা। কিন্তু মহম্মদ ইউনুস শাসিত বাংলাদেশে যেন ব্রাত্য নজরুলও। সোমবার কবির জন্মজয়ন্তীতে এলেন না বাংলাদেশের কোনও কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী।

    কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রতিবারই বাংলাদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এই উৎসবে তাঁদের প্রতিনিধি পাঠাতেন। এবার তাঁরা কোনও উদ্যোগ নেননি। এবারের উৎসবে সেদেশের কোনও প্রতিনিধি, শিল্পী থাকছেন না।

    কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার চন্দন কোনার বলেন, গত বছরই এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খ্যাতনামা শিল্পী গান করে গিয়েছেন। এবছর তাঁদের পক্ষ থেকে কোনও তাগিদ দেখা যায়নি। সেখানে আমাদের দেশবিরোধী পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। তা মাথায় রেখে আমরাও আলাদা করে কোনও আর্জি করিনি।

    সোমবার ছিল বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী। সেই উপলক্ষ্যে কবির গ্রাম চুরুলিয়ায় শুরু হয়েছে ৪৫তম নজরুল মেলা। কবির ভাইপোদের উদ্যোগে তাঁর জন্মভিটেয় নজরুল মেলার আয়োজন হয়েছিল। সেইসময় নজরুল অ্যাকাডেমি জন্মোৎসব পালন ও মেলার আয়োজন করত। পাশ্ববর্তী গ্রামের মানুষের কাছে অর্থসাহায্য নিয়ে কবিকে সম্মান জানানোর এই অনুষ্ঠানে দুই বাংলা এক হয়ে যেত। বাংলাদেশের গুণীজনরা সেইসময়ে গ্রামের সাধারণ মানুষের বাড়িতে থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। পরবর্তীকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলার আয়োজনের দায়িত্ব নেয় কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের উদ্যোগেও বাংলাদেশের শিল্পীরা অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন। এবার চুরুলিয়ার নজরুল জয়ন্তীও কার্যত বয়কট করল ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশ’।অন্যবারের মতো এদিনও প্রভাত ফেরির মাধ্যমে জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বাংলা বিভাগের প্রধান উত্তম মণ্ডল সহ বিভিন্ন অধ্যাপক র‌্যালিতে অংশ নেন। যদিও গ্রামের মানুষের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কম ছিল। র‌্যালি গোটা গ্রাম প্রদক্ষিণ করে কবি, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের সমাধিস্থলে আসে। সেখানে তাঁদের শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পাশ্ববর্তী বীরকুল্টির দশম শ্রেণির পড়ুয়া সুরজ বাউরি ৪৫০টি আর্টপেপারকে একসঙ্গে জুড়ে ২৫ফুট লম্বা ও ১১ফুট চওড়া নজরুলের একটি ছবি এঁকেছে। কবির সংগ্রহশালার বাইরে তা টাঙানো হয়। যদিও বিদ্রোহী কবির জন্মোৎসব পালন নিয়ে তাঁর গ্রামেই ঩বিদ্রোহের সুর। 

    কবির ভাইপো কাজী আলি রেজা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় চুরুলিয়াবাসীর সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। চুরুলিয়ায় মানুষজনের বাড়ির দেওয়ালে কবির ছবি, তাঁর কবিতার লাইন লেখা হতো। এবার সেসব কিছুই হয়নি। যে তোরণগুলি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলিও অসম্পূর্ণ। সমাধিস্থলগুলিও সঠিকভাবে পরিষ্কার করা হয়নি। এদিন আসানসোলের যুব আবাসে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নজরুল জয়ন্তী পালন করা হয়। 
  • Link to this news (বর্তমান)