ডিআই অফিসের দুই আপার ডিভিশন ক্লার্ককে সাসপেন্ড, কড়া সিদ্ধান্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শিক্ষাদপ্তরের
বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অফিসের দুই কর্মীকে সাসপেন্ড করল রাজ্য। গত ৪ মার্চ ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় সিআইডি সুব্রত তুঙ্গ ও পুলকেশ মাইতি নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে। এই মুহূর্তে দু’জনেই জেল হেফাজতে। ১৫ দিন আগে বিকাশ ভবন থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব স্কুল এডুকেশন (এডিএসই) তমলুকে ডিআই অফিসে আসেন। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতে সিআইডির হাতে ধরা পড়া দু’জনেই সাসপেন্ড হয়েছেন। ধৃত সুব্রত তুঙ্গ ডিআই অফিসে আপার ডিভিশন ক্লার্ক। পুলকেশ মাইতি ডিআই অফিস থেকে হলদিয়া গভর্নমেন্ট কলেজে বদলি হয়েছেন। ডিআই অফিসে কর্মরত থাকাকালীন ভুয়ো শিক্ষকদের মাইনে রেগুলার করার কাজে তাঁর হাত ছিল বলে অভিযোগ। উচ্চ শিক্ষা দপ্তর থেকে তাঁকেও সাসপেন্ড করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তমলুক ব্লকের খামারচক হাইস্কুলে এসএসসি পরীক্ষা ছাড়াই দুই ভুয়ো শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়। হাইকোর্টে ভুয়ো শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় রাজ্যজুড়ে শিক্ষকদের নথি ভেরিফিকেশন হয়। ওই প্রক্রিয়া চলাকালীন ২০২৩ সালে ওই স্কুলে শুভেন্দু হাটুয়া নামে এক ভুয়ো শিক্ষকের হদিশ মেলে। ওই কেসে তদন্ত করছে সিআইডি। তারা শুভেন্দুকে গ্রেপ্তার করেছিল। সেই ঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোককুমার হাটুয়া এবং প্রাক্তন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) চাপেশ্বর সর্দারও গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁরা সকলে জামিন পান। গত মার্চ মাসে ফের ওই স্কুলে অয়নকুমার দাস নামে আরেক ভুয়ো শিক্ষকের হদিশ মেলে। নথিপত্র ভেরিফিকেশন চলাকালীন এই ঘটনা সামনে আসে। ৬ মার্চ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পলাশ রায় এনিয়ে তমলুক থানায় এফআইআর করেন। ১১ মার্চ সিআইডি অয়নকুমার দাসকে গ্রেপ্তার করে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ১৮ মার্চ ফের ওই স্কুলের অবসর নেওয়া প্রধান শিক্ষক অশোককুমার হাটুয়াকে গ্রেপ্তার করে।
ভুয়ো শিক্ষকরা কীভাবে রেগুলার শিক্ষকদের মতো মাইনে পেতেন সেই ঘটনার তদন্তে সিআইডি ডিআই অফিসে হানা দেয়। সেখানেই বড়সড় ক্লু পেয়ে যায় সিআইডি। জেল হেফাজতে থাকা সুব্রত তুঙ্গ ডিআই অফিসের যাবতীয় চিঠিতে মেমো নম্বর দিতেন। সেই সুবাদে নকল চিঠিতেও সরকারি মেমো নম্বর দিয়েছিলেন। সাসপেন্ড হওয়া পুলকেশ শিক্ষকদের মাইনের বিষয়টি দেখতেন। কম্পিউটারে নথি জালিয়াতি করে ভুয়ো শিক্ষকদের মাইনে নিয়মিত করে দেওয়ার কাজে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ।
জোড়া ভুয়ো শিক্ষক দুর্নীতির ঘটনায় এখনও সিআইডি তমলুক ডিআই অফিসের কর্মীদের ধারাবাহিকভাবে জেরা করে চলছেন। অবসর নেওয়া প্রাক্তন ডিআই সহ কর্মীদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে রাজ্যের শিক্ষাদপ্তরকে চিঠি দিয়ে দু’জনের গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানানো হয়। এরপরই শিক্ষাদপ্তরের এক আধিকারিক তমলুক শহরে মানিকতলায় অবস্থিত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিসে এসে তদন্ত করেন। তারপর দু’জনকে সাসপেন্ড করা হয়। সিআইডির তমলুক অফিস থেকে ওই ঘটনার তদন্ত চলছে। চার্জশিট জমা করার জন্য ভবানী ভবনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে বলে খবর। সবুজ সংকেত পেলেই পূর্ব মেদিনীপুর সিজেএম কোর্টে চার্জশিট পেশ করা হবে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পলাশ রায় বলেন, সম্প্রতি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অব স্কুল এডুকেশন (এডিএসই) আমাদের অফিসে এসেছিলেন। তারপরই দুজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিস।-নিজস্ব চিত্র