কালীগঞ্জ বিধানসভার উপ নির্বাচনে প্রার্থী খুঁজতে হিমশিম গেরুয়া শিবির
বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কালীগঞ্জ বিধানসভায় প্রার্থী খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছে গেরুয়া শিবির। তৃণমূলের ‘দুর্গ’ হিসেবে খ্যাত এই কেন্দ্রে অতীতে বিজেপি সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি। তাই আসন্ন উপনির্বাচনে বিজেপি কতটা সক্রিয়ভাবে ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অন্যদিকে বাম-কংগ্রেসের জোট প্রার্থী নিয়েও জল্পনা বাড়ছে। এর আগে কালীগঞ্জ বিধানসভায় কখনও সিপিএম প্রার্থী দেয়নি। বরাবরই কংগ্রেস কিংবা আরএসপি-র বিধায়ক ছিল এই কেন্দ্রে। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত টানা এই কেন্দ্রে বামফ্রন্টের তরফ থেকে আরএসপি প্রার্থী দিয়ে এসেছে। তাই বাম-কংগ্রেসের মধ্যে কোন দল শেষ পর্যন্ত ‘আত্মত্যাগ’ করবে সেটাই দেখার। ইতিমধ্যেই আরএসপি’র তরফ থেকে বামফ্রন্টকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যাতে আসন্ন উপনির্বাচনে তাঁদের দল থেকেই প্রার্থী বাছা হয়। যদিও বিরোধী শিবির এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য কালীগঞ্জ বিধানসভা বরাবরই তৃণমূলের গড়। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী নাসিরউদ্দিন আহমেদ ১৭ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে ছিল আরএসপি প্রার্থী শঙ্কর সরকার। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী হাসানুজ্জামান শেখ ১২০০ ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী নাসিরউদ্দিন আহমেদকে পরাজিত করেছিলেন। পরবর্তীতে হাসানুজ্জামান শেখ তৃণমূলে যোগদান করেন। একুশের নির্বাচনে পুনরায় নাসিরউদ্দিন আহমেদ তৃণমূলের টিকিটে ৪৬ হাজার ভোটে জয়ী হয়ে কালীগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক হয়েছিলেন। সেবার দ্বিতীয়স্থানে ছিল বিজেপি প্রার্থী। কালীগঞ্জে বিধানসভার প্রায় ৬৫ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে। যা বরাবরই তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকে থেকেছে বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের। গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৯৪ হাজার ১৮টি ভোট পান। বিজেপি প্রার্থী অমৃতা রায় ৬৩ হাজার ৩৪৫ এবং সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদী ৩৬ হাজার ৬৯৮ ভোট পান।
বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বাম ভোট রামে যাওয়ায় বিজেপির উত্থান হয় কালীগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে। যদিও সাংগঠনিকভাবে এই কেন্দ্রে সেভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি গেরুয়া শিবির। গোবরা, মাটিয়ারি, ফরিদপুরের মতো হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চায়েতে বিজেপি সীমাবদ্ধ থেকেছে। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন উপ নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের। সম্প্রতি রাজ্যের এক বিজেপি নেতা নাকাশিপাড়া এসে বলেছিলেন, ‘কালীগঞ্জ হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে।’ সেই জায়গায় উপনির্বাচনের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে বিজেপি আদৌ কতটা সুবিধা করতে পারবে সেই নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
কালীগঞ্জে বিধানসভার সিপিএম নেতা দেবাশিস আচার্য বলেন, বামফ্রন্ট যাকে প্রার্থী করবে তার হয়েই লড়ব। তবে কালীগঞ্জ বিধানসভায় তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে প্রধান শক্তি সিপিএম। উপনির্বাচনে আমরা ভালো ফল করব।
কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মুখপাত্র সন্দীপ মজুমদার বলেন, প্রার্থী নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। রাজ্য কমিটি এই সিদ্ধান্ত নেবে। সময়মতো নাম ঘোষণা করা হবে। আরএসপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য ও নদীয়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাহুল মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা বামফ্রন্টকে চিঠি করেছি। এই আসনটিতে বরাবরই আরএসপি প্রার্থী দিয়ে এসেছে। তাই আসন্ন উপ নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে আরএসপি›কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হোক। কৃষ্ণনগর সংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, বিরোধীদের নিয়ে আমরা মাথা ঘামাচ্ছি না।। ব্যাপক পরিমাণে লিড দিয়ে এই কেন্দ্রটি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। দল যাকে প্রার্থী করবে, তাঁর হয়েই লড়াই করা হবে।