• কৃষ্ণনগর শহরেই নজরুলের কাব্যচর্চার মোড় ঘুরেছিল
    বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
  • অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগর শহরের বুকে অঞ্জনা নদীর ধারে আমবাগানেই কাজী নজরুল ইসলাম হাতে সৃষ্টি হয়েছে বহু কবিতা, উপন্যাস ও গান। কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যশালী গ্রেস কটেজের পাশেই সেই আমবাগান ছিল।‌ যদিও বর্তমানে সেই বাগানের অস্তিত্ব নেই। সেখানে বিদ্যুৎ অফিস তৈরি হয়েছে। মাথা তুলেছে বড় বড় বিল্ডিং।‌ কৃষ্ণনগর শহর বসেই লিখেছিলেন ‘ছাত্রদলের গান’। শুধু তাই নয়, বিখ্যাত ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাস এই মৃৎশিল্পের শহরে চাঁদসড়ক পাড়ায় বসেই লিখেছিলেন তিনি। সেই উপন্যাসের শুরুতেই কৃষ্ণনগরের নাম জড়িয়ে ছিল— ‘পুতুল খেলার কৃষ্ণনগর’।‌ উপন্যাসটির বিভিন্ন চরিত্রও সৃষ্টি হয়েছিল কৃষ্ণনগর শহর থেকেই।  

    জানা যায়, জানুয়ারি ১৯২৬ থেকে ডিসেম্বর ১৯২৮ পর্যন্ত কবি কাজী নজরুল ইসলাম সপরিবারে কৃষ্ণনগরে বাস করেন। হিন্দু কন্যা প্রমিলাদেবীকে বিবাহ করার পর কলকাতার সমাজে ক্রমে একঘরে হয়ে পড়েন কবি। সমাজের কট্টর ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সংকীর্ণতার কাছে হার মানেনি তাঁর প্রেম, কিন্তু তার রূঢ় পরিণতি তাঁকে করে তোলে নিঃসঙ্গ ও আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। সেই সময় কবি অসুস্থও হয়ে পড়েন। এই সংকটকালেই কবির আপনজন হয়ে পাশে দাঁড়ান বন্ধু ও অভিভাবক হেমন্তকুমার সরকার। তিনিই কবিকে নিয়ে আসেন নদীয়ার কৃষ্ণনগরে, একটু স্বস্তি ও নিরাময়ের আশায়।

    কৃষ্ণনগরে এসে নজরুল প্রথম আশ্রয় নেন গোলাপট্টির মদন সরকার লেনে, হেমন্ত সরকারের পৈত্রিক বাড়ির একটি অংশে। সেখানে কিছু মাস কাটানোর পর তিনি স্থান পরিবর্তন করে চলে যান মূল শহরের একটু বাইরে, চাঁদ সড়ক পাড়ায় অবস্থিত ‘গ্রেস কটেজ’-এ। শান্ত, সবুজে ঘেরা সেই পরিবেশে কবির সৃষ্টিশীল মন কিছুটা প্রশান্তি খুঁজে পায়। সেখান থেকেই বাংলা সাহিত্যের নতুন দিগন্ত খুলে দেন তিনি। 

    কৃষ্ণনগর শহরের রাগ প্রধান গানের চল ছিল বহু বছর ধরে। এই শহরে এসেই প্রথম সংস্পর্শে আছেন কাজী নজরুল ইসলাম। তা থেকেই বাংলা সাহিত্যে গজল গান লিখতে শুরু করেন তিনি। অনেকেই মনে করেন, বাংলায় আগে গজল গান লেখা হতো না। কাজী নজরুল ইসলামই তা শুরু করছিলেন। উর্দু ভাষার গজলকে বাংলায় রূপান্তরিত করে বাংলা গানের নতুন ধারা তৈরি করেন কাজী নজরুল ইসলাম। 

    পাশাপাশি নজরুল ইসলামের লেখা দেশাত্মবোধক কবিতা ও গানের যোগসূত্র রয়েছে এই কৃষ্ণনগর শহরের সঙ্গে। কারণ ১৯২৬ সালে বঙ্গীয় কৃষক সভার সম্মেলন হয়েছিল কৃষ্ণনগর শহরে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। অল্পবয়সি ছেলেদের নিয়ে ‘রেড শার্ট’ নামে স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী তৈরি করেছিলেন।‌ সেইসময় বহু নতুন নতুন গান ও কবিতা লিখেছিলেন তিনি। সেই সম্মেলনের জন্য লিখেছিলেন—  ‘আমরা শক্তি আমরা বল, আমরা ছাত্রদল’। 

    শহরের আদি বাসিন্দা সঞ্জিত দত্ত বলেন, কৃষ্ণনগর শহরে এসে কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যচর্চা নতুন মোড় নেয়। অনেক কালজয়ী কবিতা, উপন্যাস এই শহর থেকে তিনি লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে গজল গানের প্রচলন কাজী নজরুল ইসলামের হাত ধরে শুরু হয় এই শহর থেকেই। এই ঐতিহ্যশালী শহরের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)