পর্যটনই বদলে দিয়েছে অযোধ্যা পাহাড়ের সাতটি গ্রামের অর্থনীতি
বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, পুরুলিয়া: সাতটি গ্রাম মিলিয়ে ১০ জনেরও নিজস্ব গাড়ি ছিল না। গত ১০ বছরে সেই সাতটি গ্রামেই গাড়ির মালিকের সংখ্যা শতাধিক। পাশাপাশি বেড়েছে গাড়ির চালকের সংখ্যাও। শুধুমাত্র পর্যটনের ওপর নির্ভর করে বাঘমুন্ডির অযোধ্যা পাহাড়তলির একাধিক গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থা আমূল পাল্টে গিয়েছে। মমতার জমানায় পর্যটনের ওপর ভর করেই পাল্টে যাচ্ছে এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতি এবং জীবনধারণের মান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঘমুন্ডি ব্লকের বাঘমুন্ডি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পাহাড় লাগোয়া সাতটি গ্রাম— বাড়েরিয়া, লহরিয়া, কুদনা, খটকাডি, চিটাহি, চিকনবাগান এবং ভবানীপুর। অযোধ্যা পাহাড়তলির এই গ্রামগুলির বাসিন্দাদের এক সময়ে মূল জীবিকা ছিল চাষআবাদ। অনেকে জঙ্গলের শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রি করতেন। ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। ওই সাতটি গ্রামের যৌথ কমিটি অযোধ্যা সুন্দরী পর্যটন কমিটির সূত্রে জানা গিয়েছে, লহরিয়া শিবমন্দির সংলগ্ন মাঠেই পর্যটকের বাস দাঁড়ায়। সেখান থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে তাঁরা অযোধ্যা পাহাড়ে বেড়াতে যান। মন্দির চত্বরে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় সারাবছরই প্রায় শতাধিক দোকান ব্যবসা করে। সেগুলি স্থানীয়দেরই। পর্যটনের ভরা মরশুমে ওই দোকানের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। ওই পর্যটন কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ মাহাত, কোষাধ্যক্ষ তপনচন্দ্র মাহাত বলেন, প্রায় ১০-১২ বছর আগে পাহাড়তলির এই সাতটি গ্রামে ১০টিও গাড়ি ছিল না। বর্তমানে গাড়ি সংখ্যা শতাধিক। কেউ নতুন গাড়ি কিনে, কেউ আবার পুরনো গাড়ি কিনে পর্যটকদের ঘোরান। এছাড়াও পর্যটনের মরশুমের তিনমাস অনেকে বাইরে থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে এসে গ্রামে রাখেন। তাঁরা আরও বলেন, হাতে গোনা কয়েকজন আগে গাড়ি চালাতে জানতেন। এখন গ্রামের অনেক বাসিন্দাই গাড়ি চালিয়ে পর্যটকদের নিয়ে যান। স্থানীয় একটি হোম স্টের মালিক জয়ন্ত মাহাত বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলেই গ্রামগুলির চেহারায় পাল্টে গিয়েছে। আগে যেখানে একটা চা-চপেরও ভালো দোকান ছিল না, সেখানে এখন দু’ পা বাড়ালেই হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হোম স্টের ছড়াছড়ি। গ্রামের অর্থনীতি পাল্টে দেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রীর। দিদি এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নিজে এসে থাকাতেই পর্যটকরা অযোধ্যায় আসার ভরসা পান। তিনি আরও বলেন, চাষবাস নির্ভর গ্রামগুলিতে এখন কেউ গাড়ির মালিক, কেউ গাড়ির চালকের কাজ করেন, কেউ আবার করেন গাইডের কাজ। এছাড়াও লহরিয়া শিবমন্দির চত্বর ছাড়াও পাহাড়ের একাধিক জায়গায় দোকান করে সংসার চালান প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। গোটা এলাকার অর্থনীতিটাই এখন পর্যটন নির্ভর। স্থানীয় গাড়ির চালক এবং মালিক ভূতনাথ মাহাত, বিধান মাহাত, গৌতম মাহাত বলেন, পর্যটকদের ওপর নির্ভর করেই গাড়িগুলি চলছে। তিন মাস সবচেয়ে বেশি চললেও অন্য সময়েও পর্যটকদের আনাগোনা লেগে রয়েছে। তবে গ্রামে গাড়ির সংখ্যাও কম নয়। প্রতিযোগিতাও রয়েছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে পর্যটনকে নির্ভর করেই আবর্তিত হচ্ছে স্থানীয় গ্রামগুলির অর্থনীতি।