‘পরীক্ষা দেব না, বিজ্ঞপ্তিও চলবে না’, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানতে নারাজ চাকরিহারা শিক্ষকরা
বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: শিক্ষাসচিবের সঙ্গে কথা বলেও পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন চাকরিহারা শিক্ষকরা। বৈঠক চাইছেন তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও। আর চাইছেন পরীক্ষা ছাড়াই চাকরি ফিরে পাওয়ার আশ্বাস। সোমবার বিকাশ ভবনে শিক্ষাসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পরও এটাই অবস্থান আন্দোলনকারী শিক্ষকদের। তাঁরা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, আন্দোলন থামছে না। বরং তার রেশ এবার দিল্লিমুখী। এদিনই আন্দোলনকারীদের মধ্যে বিজেপি ঘনিষ্ঠ একাংশ রাজধানীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। আরও কয়েকজন প্রতিনিধি দিল্লি পাড়ি দিচ্ছেন। আইনি লড়াই তো বটেই, আন্দোলনকেও দিল্লির দরবারে নিয়ে ফেলতে চাইছেন তাঁরা। তবে, শিক্ষাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে রিভিউ পিটিশনের ড্রাফ্ট দেখে তাঁরা সন্তুষ্ট। সাংবাদিক বৈঠকে তাঁরা তা স্বীকারও করেছেন। আন্দোলনকারীদের তরফে বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, ‘পুরো খসড়াই দেখানো হয়েছে। আমাদের দেখে মনে হয়েছে সেটা ঠিকই আছে।’ তবে তাঁদের বক্তব্য, বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর তাঁরা পাননি। সেগুলি শিক্ষামন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীই দিতে পারতেন। তাই এদিনের বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী না থাকায় তাঁরা হতাশ।
আন্দোলনকারীরা জানান, তাঁরা বৈঠকে স্পষ্ট দাবি করেছেন—রিভিউ পিটিশনের আগে কোনও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে না। পরীক্ষা নয়, প্যানেল পুনর্গঠন করে, অযোগ্যদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের নিয়োগ করুক সরকার। সূত্রের খবর, রাজ্যের রিভিউ পিটিশন এখনও শুনানির জন্য গৃহীত হয়নি। গৃহীত হওয়ার আগে ‘ডিফেক্ট ক্লিয়ারিং’ পর্যায়ে রয়েছে সেটি। আবার, সোমবার থেকেই ছুটি পড়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। অথচ, ৩১ মে পর্যন্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়সীমা দিয়ে রেখেছে শীর্ষ আদালত। এরইমধ্যে ২ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসএসসি’র নিয়োগবিধি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। তাই আন্দোলনকারীদের চাপ, আর আইনি ফাঁড়া রাজ্য সরকার কীভাবে সামলায়, সেটাই এখন দেখার।
চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, আদালতে তাঁদের সঙ্গে সুবিচার হয়নি। যে নথি সিবিআই উদ্ধার করেছে, তাকে মান্যতা দিক সুপ্রিম কোর্ট। যাঁদের ওএমআর শিটের প্রতিলিপিতে কোনও অসঙ্গতি মেলেনি, তাঁরা কেন ভুক্তভোগী হবেন? এই প্রশ্ন ফের তোলেন তাঁরা। দু’ঘণ্টার বৈঠকে শিক্ষাদপ্তরের প্রধান সচিব বিনোদ কুমার এবং সিনিয়র সচিব শুভ্র চক্রবর্তীর কাছে এই প্রশ্নগুলিও রাখেন তাঁরা। বারবার বোঝান, কোনওভাবেই যেন পরীক্ষা বা নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করা হয়। আন্দোলনকারীদের সবরকম আশ্বাস এই সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। যেমন, বিশেষভাবে সক্ষম বা অন্য কোনও গভীর অসুস্থতা থাকা প্রার্থীদের চাকরি ফেরানোর ব্যবস্থা কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নও রাখা হয়েছিল। সেগুলির সদুত্তর তাঁরা পাননি বলেই প্রতিনিধিরা দাবি করেছেন। সে কারণেই মহম্মদ হাবিবুল্লাহ নামে এক প্রতিনিধি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বৈঠকে থাকলে আমরা ১০০ শতাংশ খুশি হতাম।
শিক্ষামন্ত্রী তাঁদের কাছ থেকে বৈঠকে বসার জন্য লিখিত আবেদন পাননি বলে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন। তারপর গত মঙ্গলবার আন্দোলনকারীরা শিক্ষামন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে তাঁদের সাক্ষাৎ চেয়ে চিঠি দেন। আন্দোলনকারীরা শনিবার শিক্ষামন্ত্রীকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তিনি সোমবারের মধ্যে বৈঠকে না ডাকলে বৃহত্তর আন্দোলন হবে। যদিও রবিবার একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, চিঠিতে আলোচ্য বিষয় নিয়ে কিছু বলা নেই। তাই সেটা আমাদের আধিকারিকরা তাঁদের কাছ থেকে জানবেন। সেইমতোই সোমবার আধিকারিক পর্যায়ের বৈঠকে ডাকা হয় আন্দোলনকারীদের।