• পারদ নামলেও দিনভর বৃষ্টিতে নাকাল শহর, দুর্যোগ সপ্তাহভর
    বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকলেও গত ক’দিন ধরে ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি বাড়ছিল। সোমবার সকাল থেকে আমূল বদলে যায় আবহাওয়া। কখনও ইলশে গুঁড়ি, কখনও মুষলধারে বৃষ্টি চলে দিনভর। কলকাতা সহ সমগ্র দক্ষিণবঙ্গে সকাল থেকে একইরকম আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়। ফলে তাপমাত্রার পারদ নামলেও সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে সর্বত্র নাকাল হতে হয়েছে মানুষকে। শিয়ালদহ স্টেশন, বড়বাজার, নিউ মার্কেটের মতো কলকাতার ব্যস্ততম এলাকায় কিছুটা জলও জমে। তবে সারাক্ষণই টিপটিপ বৃষ্টি চলায় জমা জলের সমস্যা মাত্রাছাড়া হয়নি। কিন্তু কর্মস্থলে যাওয়া, সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা—দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিঘ্নিত হয়েছে সবটাই। এই অবস্থায় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়ে  দিয়েছে, এখানেই শেষ নয়! দুর্যোগ চলবে গোটা সপ্তাহভর। 

    দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু রাজ্যের দোরগোড়ায় এসেই পড়েছে। এখন গোটা রাজ্যে চলছে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের তৈরি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাব। এর ফলে চলতি সপ্তাহে গোটা রাজ্যে বেশি মাত্রায় বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। আজ, মঙ্গলবার বৃষ্টির মাত্রা কিছুটা কমলেও কাল, বুধবার থেকে তা ফের বাড়বে বলে জানিয়েছেন আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা হবিবুর রহমান বিশ্বাস। আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৩১.৩ ডিগ্রি) স্বাভাবিকের থেকে ৩.৮ ডিগ্রি কম ছিল। 

    দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এদিন বিক্ষিপ্তভাবে হাল্কা বৃষ্টি হয়। সকাল থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয় দীঘা, তমলুক, হলদিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায়। দুই বর্ধমানে বৃষ্টি নামে দুপুরে। বীরভূমের রামপুরহাট, বোলপুরে বৃষ্টির দাপট থাকলেও সিউড়িতে এক-দু’পশলা হয়েছে। সকালে তারাপীঠ, রামপুরহাটে প্রায় ২০ মিনিট অঝোর ধারায় বৃষ্টি চলে। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর, ডোমকল, কান্দি, জঙ্গিপুর ও লালবাগ মহকুমা এদিন বৃষ্টি পেয়েছে। বৃষ্টি স্বস্তি দিয়েছে পাট ও সব্জি চাষিদের। দুই ২৪ পরগনা, নদীয়া, হাওড়া, হুগলির পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলের  বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায় এদিন হাল্কা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি হয়েছে। 

    প্রাক-বর্ষার এই সময়ে বৃষ্টি আচমকা এতটা বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, আরব সাগরের উপর কয়েকদিন আগে যে গভীর নিম্নচাপটি সৃষ্টি হয়েছিল, সেটি এখন দুর্বল হয়ে ঘূর্ণাবর্ত হিসেবে মহারাষ্ট্রের উপর অবস্থান করছে। ওই ঘূর্ণাবর্ত থেকে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এমনিতেই রা঩জ্যের বায়ুমণ্ডলে বেশি মাত্রায় জলীয় বাষ্প ঢুকছিল। নিম্নচাপ অক্ষরেখার প্রভাবে আরও বেশি জলীয় বাষ্প ঢুকতে শুরু করেছে। সেই কারণেই তৈরি হচ্ছে বৃষ্টির উপযোগী শক্তিশালী মেঘ। সেই সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর অগ্রগতিও অব্যাহত। মৌসুমি বায়ু এখন বঙ্গোপসাগরে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে। নিম্নচাপের ধাক্কায় বেশ কিছুটা আগেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢুকে যেতে পারে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর আগেই জানিয়েছে, দিন তিনেকের মধ্যে হিমালয় সংলগ্ন উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে বর্ষা প্রবেশ করবে।
  • Link to this news (বর্তমান)