• কারবারে মন্দা, স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু জোড়া চাপে আত্মঘাতী ব্যবসায়ী
    বর্তমান | ২৭ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, উলুবেড়িয়া: সোমবার ভোরে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল রাজাপুর থানার পুলিস। ঘটনাটি ঘটেছে রাজাপুর থানা এলাকার খলিসানি গ্রামে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম সুব্রত দাস (৬৪)। সূত্রের খবর, পুলিস একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য উলুবেড়িয়ার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে রাজাপুর থানার পুলিস।

    আমতার খলিসানি মালপাড়ায় সুব্রতবাবুর সোনার দোকান রয়েছে। ওই ব্যবসাকে সামনে রেখেই চলত বন্ধকী ও সুদের কারবার। ব্যাঙ্কের থেকে বাড়তি সুদে দেওয়া হবে, এই প্রতিশ্রুতি দিয়েই টাকা তুলতেন তিনি। সাধারণ মানুষও বাড়তি লোভের টোপে পা দিয়ে টাকা জমা করতেন তাঁর কাছে। সেই টাকাই তিনি চড়া হারে সুদে খাটাতেন। এই কারবারে ইদানীং মন্দা নেমে আসায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন সুব্রতবাবু। দিনে দিনে ঋণের অঙ্ক বাড়তে থাকায় পাওনাদাররা প্রায়ই এসে তাগাদা দিতেন। এ নিয়ে সংসারেও অশান্তি চলছিল। গত মঙ্গলবার এই অশান্তির কারণেই সুব্রতবাবুর স্ত্রী তনুশ্রী দাস (৫০) আত্মঘাতী হন। একদিকে পাওনাদারের চাপ, অন্যদিকে স্ত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে আরও ভেঙে পড়েন সুব্রতবাবু। যার পরিণতিতেই গলায় ফাঁস দিয়েছেন তিনি।  

    এদিকে, সুব্রতবাবুর মৃত্যুর খবর শুনে সোমবার সকাল থেকে পাওনাদাররা তাঁর দোকান ও বাড়িতে হাজির হতে শুরু করেন। টাকা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই কান্নাকাটি শুরু করেন। এক গৃহবধূ বলেন, আশি হাজার টাকা জমা করেছিলাম। জুন মাসের ৫ তারিখে সুদ সহ টাকা দেওয়ার কথা ছিল সুব্রতবাবুর। তার আগেই আত্মঘাতী হলেন তিনি। ভেবেছিলাম, ওই টাকা দিয়ে একটা ঘর তৈরি করব। তা আর হবে না। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুব্রতবাবুর এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। তাঁদের সকলেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। তাঁর ছেলে শুভাশিস দাস বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই বাবা অবসাদে ভুগছিলেন। মা  মারা যাওয়ার পর এক সপ্তাহ বাবা দোকান খোলেননি। বাবার নাকি ব্যবসা ভালো চলছিল না। বিষয়টি তিনি মাকে প্রায়ই বলতেন। কিন্তু পরিস্থিতি যে এদিকে, মোড় নেবে, ভাবতে পারিনি। এক সপ্তাহের মধ্যে বাবা-মা দু’জনকেই হারালাম।
  • Link to this news (বর্তমান)