• বিধি-সংরক্ষণ-শূন্যপদে সিলমোহর বাকি, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ঘিরে উদ্বেগ
    এই সময় | ২৭ মে ২০২৫
  • এসএসসি-র ২০১৬-র নিয়োগ-প্রক্রিয়া এবং পুরো প্যানেল সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করেছিল গত ৩ এপ্রিল। পরে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশনের ভিত্তিতে চাকরিহারা ‘আন–টেন্টেড’ শিক্ষকদের শুধু ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ চালানোর অনুমতি দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।

    ১৭ এপ্রিলের সেই রায়ে ৩১ মে–র মধ্যে নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ–প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময়াসীমাও বেঁধে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই মতো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্যে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)–এর হাতে রয়েছে আর মোটে পাঁচ দিন।

    সেই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি-সহ ৩১ মে–র মধ্যে শীর্ষ আদালতে হলফনামা জমা দেওয়ারও সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। অন্যথায় রাজ্য, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, এসএসসি–র জরিমানা হবে এবং ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরিহারা শিক্ষকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার যে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে ১৭ এপ্রিলের রায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

    মাঝের এই চার–পাঁচ দিনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং হলফনামা জমার কাজ আদৌ সাঙ্গ করা সম্ভব কি না, সে নিয়ে সংশয় বাড়ছে শিক্ষা–প্রশাসনেও। উত্তরোত্তর উদ্বেগ বাড়ছে চাকরিহারাদের পাশাপাশি চাকরিপ্রার্থীদের।

    রাজ্যের ৯,৪৮৭টি মাধ্যমিক ও ৬,৯৫২টি উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলে ঠিক কতজন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিতে পারবে এসএসসি, এই নিয়োগে ওবিসি সংরক্ষণের নীতি কী হবে—তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আবার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের বিধি সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজও বাকি। ২০১৬–য় নিয়োগ–প্রক্রিয়ায় শিক্ষাকর্মীদের ওএমআর সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট বিধিই ছিল না।

    যা নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখেও পড়েছে এসএসসি। তবে এই সংক্রান্ত বিধি তৈরি করে ২০২২–এ নবান্নে পাঠিয়েছিল বিকাশ ভবন। আবার শিক্ষকদের ওএমআর সংরক্ষণ এক বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর করার কথা হয়েছে। কিন্তু এই বিধি–বদল নিয়ে আইন দপ্তরের অনুমোদন এখনও আসেনি।

    ২০১৬–র নিয়োগ–প্রক্রিয়ার মাঝপথে আচমকাই স্কুলে–স্কুলে শিক্ষক–শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষমতা স্কুল পরিচালন সমিতির হাত থেকে নিয়ে পর্ষদের উপরে ন্যস্ত করেছিল রাজ্য। শিক্ষাকর্মীদের যদিও নিয়োগপত্র দিয়েছিল এসএসসি–র আঞ্চলিক অফিসই। সেখানেও বিধি বদলে পর্ষদের মাধ্যমে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই বিধি–বদল নিয়েও আইন দপ্তরের সবুজ সংকেত আসেনি।

    আবার ঠিক কত পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যাবে, তা নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভা এবং অর্থ দপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। তার পরই একমাত্র পর্ষদ শূন্যপদের সংখ্যা এসএসসি–র কাছে পাঠাতে পারবে। এমনিতে সুপ্রিম কোর্টে যে মডিফিকেশন অ্যাপ্লিকেশন পর্ষদ পেশ করেছিল, তাতে জানানো হয়েছিল, রাজ্যে ৭৯ লাখ শিক্ষার্থীর জন্যে মাত্র ১ লক্ষ ৫১ হাজারের মতো শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন।

    বহু স্কুলেই বহু বিষয়ে রয়েছেন মাত্র একজন করে শিক্ষক বা শিক্ষিকা। রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের নির্দিষ্ট করা ৩০:১ পড়ুয়া–শিক্ষক অনুপাতের সাপেক্ষে রাজ্যের পরিস্থিতি যে ভয়াবহ (৫২:১), পর্ষদই স্বীকার করেছিল। তার মানে সব শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হলে মোট শূন্যপদ হওয়ার কথা অন্তত ১ লক্ষ ১০ হাজার। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের শূন্যপদ বাড়াতে গেলে রাজ্য মন্ত্রিসভা সম্মতি একান্ত প্রয়োজন। অথচ, নবান্নের খবর, সেই ২ জুন হবে মন্ত্রিসভার বৈঠক।

    নিয়োগ–বিধি বদলে আইন দপ্তরের সম্মতি, পুরোনো বা নতুন পদে অর্থ দপ্তরের অনুমোদনও মাস্ট। পদ অনুমোদিত হলে তবেই পর্ষদ রস্টার (জাতভিত্তিক সংরক্ষণ) করে এসএসসি–র কাছে পাঠাতে পারবে শূন্যপদের সংখ্যা। সব মিলিয়ে নিয়োগ–বিধি বদল, শূন্যপদ–বৃদ্ধি এবং সংশোধিত বিধিতে সময়ে সম্মতি পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

    ৩১ মে–র মধ্যে নিয়োগের গেজেট বিজ্ঞপ্তি, বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং হলফনামা পেশের সুযোগ বাস্তবে কতটা রয়েছে, সে নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ। বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক–শিক্ষাকর্মী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ এবং কাউন্সেলিংয়ের দিনক্ষণও থাকতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে এই গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না–গেলে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থা আরও এক দফা বড়সড় ধাক্কার মুখে পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।

  • Link to this news (এই সময়)