তিলোত্তমার বুকে আরও পাঁচ বিল্ডিং, AI ডেটা সেন্টার তৈরিতে নিঃশব্দ বিপ্লব বাংলায়
প্রতিদিন | ২৭ মে ২০২৫
সন্দীপ চক্রবর্তী: এআই ডেটা সেন্টার তৈরিতে নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটেছে বাংলায়। একটু পিছিয়ে শুরু করলেও অন্য অনেক রাজ্যকে এক্ষেত্রেও পিছনে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ। তথ্য বলছে, চলতি বছরে কলকাতায় ও আশপাশে অন্তত গোটা পাঁচেক ডেটা সেন্টারের সূচনা হয়ে গিয়েছে। এগুলি অবশ্য প্রচারের ঢক্কানিনাদের ধারেকাছে যায়নি। এছাড়া নিউটাউন ও লাগোয়া এলাকায় আরও পাঁচটি বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়িতে ওয়েবেল আইটি পার্কে একটি এমন কেন্দ্রের সূচনা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে হয়েছে। পাশাপাশি কলকাতায় বেশিরভাগ ডেটা সেন্টার হতে চলেছে নিউটাউনের সিলিকন ভ্যালিতে।
বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালি হাবে রিলায়েন্স জিও-র মেগা ক্যাম্পাস তৈরির কাজ চলছে। এই ৪০ একর ক্যাম্পাসে বিশ্বমানের এআই দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ডেটা সেন্টার তৈরি হচ্ছে। মাইক্রোসফট ও রিলায়েন্স কর্পোরেট আইটি পার্কের উদ্যোগে হচ্ছে মেগা ক্যাম্পাস। রিলায়েন্স চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি আগেই ঘোষণা করেছেন যে এই ডেটা সেন্টারটি ২০২৬ সালেই চালু হয়ে যাবে। সেই কাজটিও দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। নিউটাউনের ২৫০ একরের সিলিকন ভ্যালি হাবে এয়ারটেল নক্ষত্র ডাটা সেন্টার, এলটিআই মিন্দটির কাজ চলছে। এসটিটি অ্যান্ড এনটিটি ডাটা সেন্টারের উদ্বোধন হয়েছে। আদানি এন্টারপ্রাইজেসের ডেটা সেন্টারটিও হবে পাঁচ লক্ষ ২৫ হাজার বর্গফুটের। নিউটাউনে এটির কাজও শেষ পর্যায়ে। রাজ্য ডেটা সেন্টার বাদে উল্টোডাঙায় এসটিটি কলকাতা ডিসি-১ উল্লেখযোগ্য। এসটিটি আসলে সিঙ্গাপুরের এসটি টেলিমিডিয়া, দ্বিতীয় কেন্দ্র তৈরির কাজ হচ্ছে নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়া-২তে। এনটিটি বা নিপ্পন টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়া-২ তে চালু হয়েছে, মোট জায়গা ৬ লক্ষ বর্গফুট।
এছাড়া হুগলির উত্তরপাড়ায় হিরানন্দানি গ্রুপের ছাড়া নিউটাউনে ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজেস, টেকনো ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও কন্ট্রোলএস-এর সেন্টারগুলিও তৈরি হবে। সবমিলিয়ে কর্মসংস্থান ৩০-৪০ হাজার হতে পারে। বাংলায় তথ্য-প্রযুক্তিতে যে সাফল্য বাড়ছে তার প্রমাণ মূলত গেমিং অ্যাপ ডিজাইনে বিখ্যাত ওয়েবস্কিটার্সের উদাহরণ। ওয়েবস্কিটার্স টেকনোলজি সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড সংস্থা আট বছর আগে যখন কাজ শুরু করেছিল তখন কর্মী সংখ্যা মেরেকেটে ৩০-এর কিছু বেশি। এখন সেখানে কর্মী রয়েছেন ৭০০। একটি নির্দিষ্ট জায়গায় অনেকগুলো ডেটা জমা হওয়ার যে প্রক্রিয়া তাকে মোটামুটিভাবে ডেটা সেন্টার বলে। বস্তুত এটা একটি নির্দিষ্ট বিল্ডিং যেখানে সার্ভার ও ইন্টারনেট কানেকশনের মাধ্যমে ডাটা সংরক্ষণ ও পরিচালনা করা হয়। একাধিক সার্ভার নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত থাকে। বিল্ডিং তৈরিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনা যাতে কম হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। বিদ্যুতের উপরও ডেটা সেন্টার নির্ভরশীল।
বস্তুত রাজ্যে বিদ্যুতের উন্নতি অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা ডেটা সেন্টার গড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় অনুঘটক হিসাবে কাজ করছে। এছাড়া বাংলার মেধা তো রয়েছেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদ বা গুরুগ্রামে কোনও বাঙালি তরুণ-তরুণী যত বেতনে কাজ করছেন তাদের কিছুটা কম বেতনেই কলকাতায় বা শিলিগুড়ি বা হলদিয়ায় কাজ করানো সম্ভব। ডেটা সেন্টারের ক্ষেত্রে হ্যাকিং রুখতে অর্থাৎ অনলাইন নিরাপত্তার খাতিরে মেধার গুরুত্ব তো রয়েছেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাধারণ জীবনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলার পর এই বিষয়ে উৎসাহ বাড়ছে।