• সরকারি প্রকল্পে দু’বার বাড়ি পাওয়ার অভিযোগ, অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধানের পরিবারের সদস্য
    বর্তমান | ২৮ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: রাজ্য সরকারের প্রধান লক্ষ্য মানুষের মাথার উপরে ছাদ তৈরি করে দেওয়া। সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কিন্তু এবার সরকারি প্রকল্পে দু’বার বাড়ি পাওয়ার অভিযোগ উঠল খোদ পঞ্চায়েত প্রধানের পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ব্লক প্রশাসন। গড়বেতা-৩ ব্লকের রসকুণ্ডু গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এই ঘটনায় বেশ শোরগোল পড়েছে। জানা গিয়েছে, এই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পাপিয়া মণ্ডল। তাঁর শ্বশুরবাড়ি নেড়োকোপা গ্রামে। অভিযোগ, পাপিয়া দেবীর শ্বশুর কৃষ্ণ পাল আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছিলেন। সেই সময় টাকা পেলেও বাড়ি তৈরি হয়নি। পরে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুসারে বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ফের নাম আসে কৃষ্ণবাবুর। সরকারের নিয়ম অনুসারে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা পান পাপিয়া দেবীর শ্বশুর। কিন্তু সেই টাকা খরচ করেও বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এনিয়ে পঞ্চায়েত প্রধানকে বলতে গেলে তিনি জানিয়েছেন, ‘পাঁচ বছর থাকব। যা খুশি করব’। বহু মানুষ যেখানে বাড়ি তৈরি করতে পারছেন না, সেখানে পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির সদস্য দু’বার বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েও তৈরি করছেন না। প্রশাসনের উচিত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।

    এদিন পঞ্চায়েত প্রধান পাপিয়া দেবী বলেন, আমি এবার বাড়ি তৈরি শুরু করব। প্রথমবার টাকা পেয়েছিলাম বলে বিষয়টি জানা নেই। গড়বেতা-৩ ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চিন্ময় সাহা বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। অন্যায় কাজ কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনা করব। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।

    প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনার প্রকল্পের টাকা আটকিয়ে দিয়েছিল। তাই সমস্যায় পড়েছিল বহু সাধারণ পরিবার। তবে প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের লক্ষ্য সকলের জন্য স্থায়ী বাসস্থান তৈরি করা। তাই রাজ্য সরকার চাইছিল, দ্রুত গৃহহীনদের সমস্যার সমাধান করতে। এরপর রাজ্যের তরফে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের সূচনা করা হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকৃত হবেন রাজ্যের ১২ লক্ষের বেশি মানুষ। এমনকী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। একইসঙ্গে সম্পূর্ণ কাজটি যাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হয় সেদিকেও বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে।

    জানা গিয়েছে, বেশকিছু এলাকায় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতার জোরে বাড়ি অনেককে পাইয়ে দিয়েছেন। এরফলে বঞ্চিত থাকছে বহু দুঃস্থ পরিবার। এই জেলাতেও একই ঘটনার অভিযোগ সামনে আসায় বেশ অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল।

    জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, একটি অভিযোগ সামনে এসেছে। দোষ করলে কেউ ছাড় পাবে না। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গোটা জেলায় ১ লক্ষ ২ হাজার মানুষ বাংলার বাড়ি পেয়েছেন। তবে বাড়ি তৈরির কাজ পর্যবেক্ষণ করে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়ে ৬২ হাজারের বেশি পরিবার উপকৃত হয়েছে। এই পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়ির সদস্য দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাননি। প্রথম কিস্তির টাকা পেলেও বাড়ি তৈরির কাজ শুরুই করেনি।

    গড়বেতা-৩ ব্লকের বিডিও দীপাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই পরিবার আগেও বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছিল কি না, সেটাও পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে।

    যদিও এনিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। এদিন জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি শঙ্কর গুছাইত বলেন, তৃণমূল মানেই দুর্নীতি। সাধারণ মানুষ বাড়ি পাবেন না। কিন্তু যাঁরা ক্ষমতাশালী, টাকা দিতে পারবেন, তাঁরাই বাড়ি পাবেন।
  • Link to this news (বর্তমান)