• প্রথম কর্মী সম্মেলনেই কড়া বার্তা তৃণমূলের, রানিগঞ্জ, এক ভোটে হলেও শহরে লিড চাই
    বর্তমান | ২৮ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানিগঞ্জ: দীর্ঘদিনের পরাজয়ের গ্লানি মুছতে আসন্ন বিধানসভা ভোটেই রানিগঞ্জ পুনরুদ্ধারে ঝাঁপাচ্ছে শাসকদল। বিধানসভা ভোটের প্রায় এক বছর আগে থেকে টানা কর্মসূচি করে শহরবাসীর মন টানতে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। সকাল, দুপুর, সন্ধ্যায় বিভিন্ন এলাকাভিত্তিক জনসংযোগ কর্মসূচি হবে। রানিগঞ্জে লিড পাওয়া যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা প্রকাশ পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক কর্মী সম্মেলনের তালিকা থেকেই। মঙ্গলবার রানিগঞ্জ শহরের কর্মী সম্মেলনের মধ্যে দিয়েই শুরু হল জেলার ব্লকভিত্তিক কর্মী সম্মেলন। সেখানে রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে জেলা নেতৃত্ব বার্তা দিয়েছে, এক ভোটে হলেও রানিগঞ্জ শহর থেকে এবার লিড চাই।

    আর এই বার্তা দিতে গিয়েই তৃণমূল নেতৃত্ব তীব্র সমালোচনার রাস্তায় হাঁটলেন। দলের জেলা চেয়ারম্যান হরেরাম সিং অভিযোগ করেন, লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে কাউন্সিলাররা পরিশ্রম করে না। আর এটা মেনে নেওয়া হবে না। নিজের ওয়ার্ডে জয় নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রানিগঞ্জের তৃণমূল নেতা হয়ে নিজের ব্যবসা বাড়াব। আর দলের প্রতি কোনও অবদান থাকবে না, তা হবে না। হিন্দিভাষী এই নেতা অবাঙালিদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের বিপদে-আপদে আমরা দেখব। আর নির্বাচনের বেলায় বিজেপি ভোট পাবে। তাও তো চলতে পারে না।

    একইসুরে জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কর্মী সম্মেলনে বলেন, হাততালি দেবেন না। মনে রাখতে হবে, লোকসভা ভোটের নিরিখে আপনারা ১১টির ম঩ধ্যে ৯টি ওয়ার্ডে হেরেছেন। পুরভোটে জিতবেন, বাকি ভোটে দলের প্রার্থী হারবে, তা তো মানা যায় না। এদিন তিনি সবাইকে এক হয়ে কাজ করার বার্তা দেন।

    পশ্চিম বর্ধমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর রানিগঞ্জ। শেষ কয়েক দশক ধরে রানিগঞ্জ ছিল লালদুর্গ। কমরেডরা শিল্পাঞ্চল পরিচালনা করতেন রানিগঞ্জে বসেই। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে এই আসনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৬ সালে ফের নিজেদের আসন পুনরুদ্ধার করে সিপিএম। যদিও এরপর থেকে রানিগঞ্জে লাল রং ক্রমশ ফিকে হয়ে গেরুয়া হতে থাকে। ২০১৯-’২৪ সাল পর্যন্ত যে ক’টি লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে, তাতে রানিগঞ্জ শহরে লিড পেয়েছে বিজেপি। এবার সেই ‘মিথ’ ভাঙতেই রানিগঞ্জের মতো হেরো মাটি থেকে কর্মী সম্মেলন শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন শহর সভাপতি রুপেশ যাদব বলেন, এখানে বিজেপি হাওয়ায় রয়েছে। আর সিপিএমের সংগঠন আছে। ভোটে দু’পক্ষই এক হয়ে বিজেপিকে ভোট করে।

    যদিও রানিগঞ্জের বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায়, এলাকাবাসীর সঙ্গে স্থানীয় নেতা ও কাউন্সিলারদের যোগাযোগই নেই। বহু নেতা, জনপ্রতিনিধিই আখের গোছাতে ব্যস্ত। যা দেখে বিরক্ত সাধারণ মানুষ। এর ফসল ঘরে তুলছে বিরোধীরা। অন্য একটি অংশের দাবি, শ্রমিক সমস্যা নিয়ে সরব হতে গেলে, মালিকপক্ষকে বাঁচাতে উপরতলা থেকে ফোন আসে। এই বিষয়টিও সংগঠনকে দুর্বল করছে। তাই এদিন জেলার নেতারা রোগ ধরেই কড়া ডোজ দিয়েছেন।

    এদিন ঘোষণা করা হয়েছে, প্রতি ওয়ার্ডে এক-এক দিন একটি এলাকায় জনসংযোগ করা হবে। সকালে ঘুরবেন মহিলা ও ছাত্র-যুবরা। সেখানে স্থানীয় মানুষের বাড়ি গিয়ে খাবার খাবেন নেতৃত্ব। দুপুর থেকে কর্মী সম্মেলনে যোগ দেবেন বিধায়ক, শহর সভাপতি। তারপর বিকেলে ছোট জনসভা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)