কেতুগ্রামে বাল্যবিবাহ রোধে চাইল্ড ফ্রেন্ডলি সঙ্ঘ তৈরি করবে প্রশাসন
বর্তমান | ২৮ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: বাল্যবিবাহ রোধে প্রচার, সেমিনারের খামতি নেই প্রশাসনের। গ্রামীণ এলাকায় এখন সবার হাতে স্মার্টফোন। ফেসবুকেই আলাপ জমছে অল্পবয়সিদের। সেখান থেকেই তাদের প্রেম পর্ব শুরু। পছন্দের মানুষের টানে ঘর ছাড়ছে নাবালিকারা। এমনই ইঙ্গিত প্রশাসনের। কেতুগ্রামে বাল্যবিবাহ রোধে এবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে চাইল্ড ফ্রেন্ডলি সঙ্ঘ তৈরি করা হবে। মহিলারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে নাবালিকাদের বোঝাবেন। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথাও তাঁরা বোঝাবেন। মেয়েদের পুষ্টি থেকে বাল্যবিবাহ রোধে কাজ করবেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা।
কেতুগ্রামজুড়ে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে। আর সেটাই ভাবিয়ে তুলেছে জেলা প্রশাসনকে। রাশ টানতে মঙ্গলবার কেতুগ্রাম-২ব্লকের পাঁচুন্দিতে বৈঠক করে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক আয়েশা রানি এ, কাটোয়ার এসডিও অহিংসা জৈন, কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ শাহনেওয়াজ। পাশাপাশি, কাটোয়া মহকুমার পাঁচ ব্লকেরই বিডিও, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছিল। সেখানেই কেতুগ্রাম-২ সহ পাঁচটি ব্লকের কোন এলাকায় গত দু’মাসে কতজন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে, তা পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝানো হয়।
এদিন জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে জেলা প্রশাসন কাজ করছে। সবাই একসঙ্গেই এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার কেতুগ্রামে বাল্যবিবাহ রোধে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যরাও কাজ করবেন। তাঁদের নিয়ে কেতুগ্রাম-২ব্লকের প্রতিটি পঞ্চায়েতেই চাইল্ড ফেন্ডলি সঙ্ঘ তৈরি করা হবে। তাঁরা নাবালিকাদের বোঝাবেন, সচেতন করবেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’মাসে কেতুগ্রাম-২ব্লকের গঙ্গাটিকুরি পঞ্চায়েত এলাকায় ৬৭জন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে। এছাড়াও, আনখোনায় ৪৩জন, আগরডাঙায় ৫০জন, পালিটায় ৩৩জন, মৌগ্রামে ৩৭জনের বিয়ে হয়েছে। কাটোয়া-২ব্লকের কড়ুই অঞ্চলে ৪২জন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে। মঙ্গলকোটের কৈচর-২ অঞ্চলে ৩৪জন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে। ওই তালিকায় থাকা প্রতিটি পঞ্চায়েতের প্রধানকে সতর্ক করেন জেলাশাসক। বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসনের সাফ বক্তব্য, স্কুলছুট কমাতে হবে। পড়াশোনার মধ্যে থাকলে নাবালিকাদের মানসিকতারও পরিবর্তন হবে। বাল্যবিবাহ রোধে কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেতুগ্রামে এমন প্রবণতা বাড়ছে। তাই জনপ্রতিনিধিদের সচেতন হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। কেতুগ্রাম-২ব্লকে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা সেভাবে কমছে না। তথ্য পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, এই ব্লকের প্রসূতিদের প্রায় ২৮.১ শতাংশই নাবালিকা। অর্থাৎ, ব্লকে ১০০জন মহিলা প্রসব করলে, তার মধ্যে গড়ে ২৮জনের বয়স ১৮-র কম। কেতুগ্রাম-২ব্লকে ২০২৪-’২৫ সালে ১৪৬৫জন মহিলা গর্ভবতী হয়েছেন। তারমধ্যে ৪১২জনই নাবালিকা। এখানেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাগীরথী পাড়ের গ্রামগুলিতে অত্যধিক হারে নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রাম যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যম জলপথ, সেখানেই সবার অলক্ষ্যে এসব হচ্ছে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ১৮-র নীচে প্রসবের ক্ষেত্রে মা ও সন্তানের নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ১৬-১৮ বছর বয়সেই শরীর ও মনের পূর্ণ বিকাশ ঘটতে থাকে। তার আগে স্তন, ডিম্বাণু বা গর্ভাশয়ের মতো অঙ্গের বিকাশ ঘটে না। ফলে নাবালিকা প্রসূতির গর্ভপাত ও রক্তক্ষরণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। নবজাতকদেরও গঠনগত ত্রুটি এবং পুষ্টির সমস্যা দেখা দেয়।