তৃণমূলের চাপে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হলেন কাজ না করা ঠিকাদার
বর্তমান | ২৮ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: কাজ না করেই ঠিকাদারকে ‘পেমেন্ট’ দিয়েছিল বিজেপি পরিচালিত নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত। বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগের পর বিষয়টি নিয়ে হইচই হতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টাকা ফেরালেন ওই ঠিকাদার। মঙ্গলবার শেখ আজিজুল নামে ওই ঠিকাদার এক লক্ষ ৮১ হাজার টাকা গ্রাম পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে ফিরিয়ে দিয়েছেন। গোটা ঘটনায় নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। রাতারাতি ড্রেনের কাজ শুরু করে ঠিকাদার সংস্থা। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিডিও ঘটনাস্থলে গেলে তাঁর সামনেই ঠিকাদারের সঙ্গে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের তুমুল বচসা হয়। শেষমেশ বিডিও ওই ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন।
সোমবার নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের পাঁচজন সদস্য বিডিওকে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। তাঁদের অভিযোগ, ৭ নম্বর সংসদে ড্রেনের কোনও কাজ হয়নি। অথচ ঠিকাদারকে এক লক্ষ ৮১ হাজার টাকা পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে। নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতের এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। মঙ্গলবার নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ, পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা শেখ আহমদুল্লা, অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি শঙ্কু নায়েক প্রমুখ বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, ঘটনাস্থলে বিডিওকে যেতে হবে। তিনি না যাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে।
এদিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ নন্দীগ্রাম-১ বিডিও সৌমেন বণিক ড্রেনের কাজ হয়েছে কি না খতিয়ে দেখতে যান। সেই সময় ঠিকাদার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ড্রেনের কাজ করাচ্ছিলেন। তৃণমূল নেতারাও বিডিও-র সঙ্গে এলাকায় যান। তাঁদের অভিযোগ, সোমবার বিডিওকে অভিযোগ করার পর রাত থেকে ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে। সুতরাং, ঘটনার তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকুক। বিডিও কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলে বিজেপির স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুদীপ পাত্র ঠিকাদারের পক্ষ নেন। তিনি বলেন, কাজ বন্ধ রাখতে হলে ব্লক প্রশাসনকে নোটিস ইস্যু করতে হবে। যদিও কোনও নোটিস ছাড়াই ড্রেনের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেন বিডিও।বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলেন, নন্দীগ্রাম পঞ্চায়েতের ৭ নম্বর সংসদে পাশাপাশি দু’টি ড্রেনের কাজ একই ঠিকাদার পেয়েছেন। দু’টি কাজের টাকার মূল্যও সমান। তারমধ্যে একটি কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আরেকটি কাজ শুরু হতে বাকি ছিল। যে কাজটি সম্পূর্ণ হয়েছে তার পরিবর্তে যেটি শুরু হয়নি সেই বিল রেডি হয়ে পেমেন্ট হয়ে গিয়েছিল। পঞ্চায়েত কর্মীর ভুলে এমনটা হয়েছে। এটা একটা ত্রুটি। আকণ্ঠ দুর্নীতিতে জড়িত তৃণমূল এই ত্রুটি নিয়ে হইচই শুরু করেছে। ওই ঠিকাদার পুরো টাকা পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে ফেরত দিয়েছেন। তিনি যে কাজটি সম্পূর্ণ করেছেন সেটির বিল জমা করতে বলা হয়েছে।
তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি শঙ্কু নায়েক বলেন, কাজ না করে পেমেন্ট হয়েছে। এনিয়ে অভিযোগ করতেই রাতারাতি ড্রেনের কাজ শুরু করে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা হয়েছিল। আমরা বিষয়টি সামনে আনায় বিডিও কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন।
শেখ আজিজুল নামে ওই ঠিকাদার বলেন, পঞ্চায়েতের নির্দেশে এক লক্ষ ৮১ হাজার টাকা পঞ্চায়েতের অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়া হয়েছে। বিডিও বলেন, অভিযোগ আসার পর কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।