অপারেশন সিন্দুরের পর ড্রোন হামলা ঠেকানোর সরঞ্জাম কেনার কথা ভাবছে কলকাতা পুলিস?
বর্তমান | ২৮ মে ২০২৫
সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির মতো ভিভিআইপি সফরে এলেই সমস্যায় পড়তে হয় এরাজ্যের পুলিস প্রশাসনকে। কারণ, ভিভিআইপি’র কনভয়ে ড্রোন হামলা ঠেকানোর প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম এখনও কলকাতা বা রাজ্য পুলিস কারও কাছেই নেই। এরাজ্যের পুলিসকর্তাদের তখন বাধ্য হয়েই এসপিজির কাছ থেকে প্রতিবার ‘অ্যান্টি ড্রোন ডিভাইস’ ধার করতে হয়। অথচ, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, মনিপুরের মতো দেশের সীমান্তবর্তী রাজ্য পুলিস অনেকদিন আগেই বেআইনি মাদক চোরাচালান, ড্রোনের মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তি ঠেকানোর পাশাপাশি সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে আকাশপথে হামলা ঠেকানোর প্রযুক্তি কিনেছে। এমনকী ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর পর ওড়িশা পুলিসও এই প্রযুক্তি কেনার কথা ভাবনা চিন্তা করছে বলে জানা গিয়েছে।
স্বাভাবতই প্রশ্ন উঠছে, তবে কি কলকাতা বা রাজ্য পুলিস আগামী দিনে এই প্রযুক্তি কেনার কথা ভাবছে? শুধু ভিভিআইপিদের সুরক্ষার প্রশ্ন নয়। এর সঙ্গে একাধিক বিষয় জড়িত রয়েছে। প্রথমত, এরাজ্যের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, নদীয়া, মুর্শিদবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা মতো জেলাগুলি স্পর্শকাতর বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই দুই দেশের সীমকরণ আমূল বদলে গিয়েছে। ফলে ২২ কিমি চওড়া ‘চিকেন নেক’ এবং সেভেন সিস্টারের সুরক্ষার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। তৃতীয়ত, তুরস্কের মতো দেশ পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও ড্রোন পাঠিয়ে সাহায্য করছে। ফলে আগামী দিনে দেশের পশ্চিম সীমান্তের মতো পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব সীমান্তেও ড্রোনের দাপট বাড়বে।
যদিও সীমান্তে নজরদারির জন্য বিএসএফ, এসএসবি, সেনাবাহিনী রয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে রাজ্য বা কলকাতা পুলিসের পক্ষে হাত গুটিয়ে থাকা বোধহয় আর সম্ভব নয়। বিশেষ করে, অপারেশন সিন্দুরের পর চলতি মাসের ১৯ তারিখে রাতের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ফোর্ট উইলিয়ামের নিষিদ্ধ জোনে আকাশে রহস্যজনক ড্রোনের আনাগোনা ঘিরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। লালবাজার তড়িঘড়ি বিষয়টি সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের কর্তাদের নজরে এনেছে। বিষয়টি তদন্ত করছে সেনাবাহিনী।
বিশেষ সূত্রের খবর, ফলে এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতি ড্রোন হামলা ঠেকানোর প্রযুক্তিগর সরঞ্জাম কেনার বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে এরাজ্যের পুলিস প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের। এনিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে কলকাতা পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মাকে মেসেজ পাঠানো হলেও, রাত পর্যন্ত কোনও উত্তর আসেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিসের এসটিএফের এক কর্তা জানাচ্ছেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে নেতাজিনগর থানা, লালবাজার, ভাঙড় ডিভিশন মিলিয়ে মোট ছ’টি সাইরেন বসানোর সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুলিস। পাহেলগাঁওতে জঙ্গি হানার পর, ভারত-পাক যুদ্ধ পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে কলকাতায় মহড়া চলাকালে দেখা যায়, কলকাতা পুলিসের সদর দপ্তর লালবাজার সহ শহরের বেশ কয়েকটি থানায় সাইরেন নেই। আপাতত ভারত-পাক যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু আগামী দিনে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে, সাইরেন বসানোর সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুলিস। সূত্রের খবর, লালবাজারের ক্ষেত্রে মেইন বিল্ডিয়ের ছাদে এই সাইরেন বসানো হচ্ছে।