রিভিউ পিটিশন তো বটেই, সেই সঙ্গে নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেও গাফিলতি করা যাবে না। নবান্ন থেকে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের এই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মঙ্গলবার নবান্নের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদের পরীক্ষায় বসতেই হবে। পরীক্ষা না দিয়ে ‘যোগ্য’দের পুনর্বহাল করা যাবে কি না তা ঠিক করবে শীর্ষ আদালতই। তবে ভবিষ্যতে রিভিউ পিটিশন থেকে ইতিবাচক রায় এলে, তা তৎক্ষণাৎ কার্যকর করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টে গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলায় খানিক দোটানায় পড়েছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, একদিকে সুপ্রিম কোর্টে গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে, অন্যদিকে ৩১ মে-র মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়সীমাও বেধে দেওয়া হয়েছে। ছুটির কারণে রিভিউ পিটিশন নিয়ে আলোচনা এখন হবে না। সেই কারণে দুটি প্রক্রিয়াই চালু থাকবে। প্রথমত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। দ্বিতীয়ত, রিভিউতে পজ়িটিভ নির্দেশ পাওযা গেলে সেটাই গ্রহণ করা হবে। রিভিউয়ের সুযোগ সব সময় খোলা রয়েছে। যতক্ষণ রিভিউ হচ্ছে না, বিজ্ঞপ্তি জারির প্রক্রিয়া চালানো হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে, ৩০ মে এসএসসির নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে রাজ্য। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ১৬ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা নেওয়া হবে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলপ্রকাশের প্রক্রিয়া শেষ হবে। ২০ নভেম্বর থেকে কাউন্সেলিংয়ের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এই পরীক্ষা প্রসঙ্গে বারংবার মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘যদি রিভিউ পিটিশনে ইতিবাচক ফল না আসে তবেই পরীক্ষা হবে।’
তবে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনেও চাকরিহারাদের একাধিক সুযোগ দিচ্ছে রাজ্য। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো ২৪,২০৩টি শূন্য পদ তৈরি হয়েছে। এই ২৪,২০৩টি পদে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এছাড়া সরকার নবম ও দশম শ্রেণির জন্য ১১,৫১৭টি শিক্ষক পদ, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য আরও ৬,৯১২টি শিক্ষক পদ তৈরি করেছে। পাশাপাশি গ্রুপ সি পদে নতুন ৫৭১ এবং গ্রুপ ডি পদে নতুন ১০০০টি পদ তৈরি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪৪,২০৩টি শূন্য পদে নিয়োগ করা হবে। এর মধ্যে নবম-দশম শ্রেণির জন্য ২৩,২১০ শিক্ষক, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ১২,৫১৪ শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। গ্রুপ সি পদে ২৯৮৯ এবং গ্রুপ ডি পদে ৫৪৮৮ জনকে নিয়োগ করা হবে।
চাকরিহারাদের জন্য বিশেষ সুবিধার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যে সকল চাকরিহারাদের আবেদন করার বয়স পেরিয়ে গিয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রে বয়সে ছাড় দেওয়া হবে। তাঁরা সকলেই পরীক্ষায় বসতে পারবেন। পাশাপাশি তাঁরা অভিজ্ঞতার জন্যও বিশেষ সুবিধা পাবেন। ‘অযোগ্য’দের জন্য কী ভাবনা রাজ্যের? মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘যাঁদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে, তাঁরা অন্য বিভাগে যোগ দিতে পারবেন। শিক্ষা-সহ আরও ৩-৪টি বিভাগের অপশন রাখা হবে। তাছাড়াও শিক্ষা বিভাগে গ্রুপ সি, ডি পদেও লোক প্রয়োজন। শিক্ষকদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৩-৪ দিন পর গ্রুপ সি, ডি-র জন্য অন্য বিভাগে নিয়োগে পৃথকভাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।’
এ দিন চাকরি বাতিল প্রসঙ্গে ফের একবার বিরোধীদের বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের ‘স্বার্থপর’ বলে কটাক্ষ করেছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘কিছু স্বার্থপর মানুষ এ কাজ করে এখন বন্ধু হয়ে ঢোকার চেষ্টা করছেন!’ মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, রিভিউ পিটিশন করে বিচার না পেলে এবং পরীক্ষাও না দিলে আর চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকবে না।