তারকেশ্বরে বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমের সঙ্গে নিজস্বী তোলার হিড়িক ভক্তদের মধ্যে
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৯ মে ২০২৫
পাকিস্তান থেকে ঘরে ফেরা বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউকে নিয়ে মানুষের আবেগ ও উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই। অনেক উৎকণ্ঠা কাটিয়ে তাঁর দেশে ফেরায় স্বস্তি পেয়েছেন গোটা ভারতবাসী। তিনি এখন দেশের মানুষের চর্চার কেন্দ্রে। বিশেষ করে বন্দি থাকাকালীন অনেক আবেগ ও উৎকণ্ঠা কাটিয়ে বাংলার মানুষের নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন পূর্ণম। রাতারাতি সেলিব্রিটি বনে গিয়েছেন তিনি। তাই এখন রাজ্যের কেউ তাঁকে কাছে পেয়ে একাত্ম হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না। অনেকেই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং মোবাইলে ক্যামেরায় এক ফ্রেমে বন্দি হওয়ার লোভ সামলাতে পারছেন না। সম্প্রতি তারকেশ্বরে পুজো দিতে গিয়ে সেই দৃশ্য সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ল। সস্ত্রীক পূর্ণমও তারকেশ্বরে পুজো দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে পূর্ণমের সঙ্গে সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছে বাবা তারকনাথের ভক্তদের মধ্যেও। পুজো দেওয়ার পরে পূর্ণম বলেন, মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতেই তাঁর তারকেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে আসা।
প্রসঙ্গত পহেলগাম জঙ্গি হামলার ঠিক পরের দিন অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল পাঞ্জাবের পাঠানকোট সীমান্তে কর্তব্যরত বাংলার বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউ ভুল করে পাকিস্তান সীমান্তে চলে গিয়েছিলেন। বিষয়টি নজরে আসতেই পাক রেঞ্জার্স তাঁকে আটক করেন। বার বার দুই দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’ করেও সমস্যার সমাধান হয়নি। বিভিন্ন বাহানা দিয়ে তাঁকে আটকে রাখে পাকিস্তান। একদিকে ২২ এপ্রিল পহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় ২৬ জন নিরীহ ভারতীয়ের নৃশংস হত্যার দগদগে ক্ষত, অন্যদিকে বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম সাউকে জোর করে পাকিস্তানে আটকে রাখার ঘটনায় চূড়ান্ত উদ্বেগে ছিল গোটা দেশ।
সাধারণত সীমান্তে এমন ঘটনা ঘটলে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর পরে সংশ্লিষ্ট জওয়ানকে মুক্তি দেওয়াই দস্তুর হলেও পূর্ণমকে তখনও ছাড়েনি পাকিস্তান। অবশেষে প্রায় তিন সপ্তাহ পর বিএসএফের সঙ্গে একের পর এক ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর পরে অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফেরেন বিএসএফ-এর এই কনস্টেবল। গত ২৩ মে রিষড়ার বাড়িতে ফেরার পর থেকে পূর্ণমকে ঘিরে আলাদা উন্মাদনা দেখা যায় স্থানীয়দের মধ্যে।
জানা গিয়েছে, পাকিস্তানে বন্দি স্বামীর জন্য মানত করেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রাজনী সাউ। প্রায় তিন সপ্তাহের টানাপোড়েন শেষে দেশে ফিরতে পেরেছেন বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউ। তবে ফেরার পরেই বাড়িতে আসার সুযোগ হয়নি। ফের তাঁকে আবার কর্তব্যে বহাল করা হয়। অবশেষে গত ২৩ মে শুক্রবার তিনি ফিরেছেন হুগলির রিষড়ায়, নিজের বাড়িতে।
বুধবারই স্বামীকে নিয়ে তারকেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে যান রজনী সাউ। দুপুর ১২টা নাগাদ তারকেশ্বর মন্দিরে যান পূর্ণম। তাঁর সঙ্গে স্ত্রী রজনী ছাড়াও ছিলেন মা দেবন্তী সাউ, পুত্র আরব ও অন্যান্য আত্মীয়রা। পুজো দিতে গিয়ে সাধারণ ভক্তদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। সে সময়ে পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষীদের কবল থেকে ফেরা বিএসএফ জওয়ানকে চিনতে একটুও ভুল হয়নি মানুষের। মন্দিরের এক পুরোহিত প্রথম ওই জওয়ানকে চিনতে পারেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, ওই পুরোহিত বিএসএফ জওয়ান এবং তাঁর পরিবারকে ‘বিশেষ ভাবে’ পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। ততক্ষণে পূর্ণমকে নিয়ে মন্দিরে উপস্থিত ভক্ত ও দর্শনার্থীদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। মন্দির চত্বরে তাঁকে দেখেই ভিড় জমান অনেকে। মন্দিরের পুরোহিতও বিশেষ উৎসাহিত। সেখানে হুগলি জেলার এই ‘নায়ক’কে ঘিরে ফটো তোলার জন্য রীতিমতো হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। পূর্ণম হাসি মুখে সকলের নিজস্বী তোলার আবদার মেটান। এমনকি, তিনি পুজো দিতে গিয়েছেন শুনে তাঁকে এক পলক দেখার জন্য রাস্তা থেকেও অনেকে মন্দির চত্বরে চলে যান। সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে এগিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তারকেশ্বরের এক পুরোহিতের কথায়, ‘উনি আসল নায়ক। তাঁকে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি।’