১০ বছর আগের আতঙ্ক ফিরছে! সিঁটিয়ে বাসিন্দারা, তিন গোষ্ঠীর লড়াইয়ে শঙ্কিত মোজামপুর
বর্তমান | ২৯ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, কালিয়াচক: আতঙ্কের দিন কি ফিরে এলো! এক সময় মালদহ জেলার কুখ্যাত এলাকা বলে পরিচিত ছিল কালিয়াচকের মোজামপুর। প্রায় প্রতিদিন খবরের শিরোনামে থাকত এই এলাকা। বোমা, গুলির আওয়াজে মাঝেমধ্যেই কেঁপে উঠত পার্শ্ববর্তী এলাকা। মোজামপুরে বিয়ের সম্বন্ধ করতে পর্যন্ত ভয় পেত আশপাশের গ্রামের পরিবার।
২০১৬ সালের আগে প্রায়ই খুনোখুনি চলত। নেপথ্যে ছিল মোজামপুরের দুই গোষ্ঠীর এলাকা দখলের লড়াই। এছাড়াও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজ কোন ঠিকাদার পাবেন, তা নিয়েও চলত তুমুল লড়াই। কিন্তু ২০১৬ সালে জেলা পুলিসের তৎপরতায় গ্রেপ্তার হন মোজামপুরের একসময়ের ত্রাস আসাদুল বিশ্বাস। এলাকায় তাঁর পরিচিতি ছিল ‘বিশ্বাস কাকা’ নামে। তাঁর প্রবল প্রতিপক্ষ ছিলেন তুহুর বিশ্বাস চৌধুরী। দু’জনের বিরুদ্ধেই একাধিক খুনের মামলা রয়েছে। দু’জনকেই পুলিস জালে তোলার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। গত রবিবার লিচুবাগানে গুলি করে খুনের চেষ্টার পর একাধিক প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়েছে। উঠে আসছে তৃতীয় এক গোষ্ঠীর নাম। এনারুল হকের নেতৃত্বে ওই গোষ্ঠীর দাপটে এখন বাঘে-গোরুতে একঘাটে জল খায় বলে জানাচ্ছেন একাংশ বাসিন্দা।
সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলেছে মোজামপুরে। অপরাধের তালিকায় যোগ হয়েছে মাদক ও অস্ত্র কারবারের নাম। যা নিয়ে ফের নতুন করে অশান্ত হতে শুরু করেছে এলাকা। গোয়েন্দা ও পুলিসের খাতায় সংযোজন হয়েছে এনারুলের নাম। তুহুরের সহায়তায় প্রবল ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে তাঁর গোষ্ঠী। যার ফলে ফের অশান্ত হতে শুরু করেছে মোজামপুর। গত বছর শেষের দিকে খুন হন এনারুলের গোষ্ঠীর একজন। এই খুনে পুলিসের খাতায় প্রথম নাম জড়ায় আসাদুলের। পাশাপাশি যোগ ছিল তাঁর ডানহাত তথা তৃণমূলের মোজামপুর অঞ্চল সভাপতি তারেক বিশ্বাস সহ ১৮ জনের। সেই মামলায় দিল্লি থেকে আসাদুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন তিনি। মাসখানেক আগে তারেকের বাড়িতে আগুন লাগানোর অভিযোগ ওঠে এনারুলদের বিরুদ্ধে। সেই থেকেই ফের গরম হাওয়া বইতে শুরু করে এলাকায়। কালিয়াচক থানা পুলিস পিকেটিংয়ের বন্দোবস্ত করেছিল সেই সময়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টহলদারি কমে যায়। এর মাঝে গত রবিবার গভীর রাতে গুলিবিদ্ধ হন আসাদুল গোষ্ঠীর সদস্য করিম খান। অভিযোগ ওঠে, এনারুল ঘনিষ্ঠ ওয়াশেদ আলি ও হামিদুল শেখের বিরুদ্ধে। সোমবার সকালেই পুলিস তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার পর থেকেই চাপা উত্তেজনার পাশাপাশি থমথমে এলাকা। বসানো হয়েছে পুলিস পিকেট। আতঙ্ক তবুও কাটছে না। - নিজস্ব চিত্র।