ব্রতীন দাস, আলিপুরদুয়ার: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভার কয়েক ঘণ্টা আগে ডুয়ার্সের চা বাগান নিয়ে ঘোর উদ্বেগের সুর খোদ বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গার গলায়। বুধবার বিকেলে আলিপুরদুয়ার শহরে কলেজ হল্টের কাছে দলীয় কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, চা বাগান ভালো নেই। ডুয়ার্সের অন্তত ৫০টি বাগানের অবস্থা খুবই খারাপ। বহু বাগানে বেতন হচ্ছে না। পেটের তাগিদে শ্রমিকরা ভিনরাজ্যে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বাগানের শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যদিও এ অবস্থার জন্য রাজ্যের ঘাড়েই দায় চাপানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। একইসঙ্গে মনোজের দাবি, কেন্দ্রের বাণিজ্যমন্ত্রক, ভারী শিল্প মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট মহলে বারবার ডুয়ার্সের চা বাগানগুলির অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী চা বাগান নিয়ে কী বার্তা দেন, এখন তার অপেক্ষায় রয়েছি।
যদিও চা বাগান ইস্যুতে বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়েননি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশচিক বরাইক। তাঁর তোপ, এর আগে সাতটি চা বাগান অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছিল। তার কী হল? কেন্দ্রের বাণিজ্যমন্ত্রক চা শ্রমিকদের সামাজিক উন্নয়নে হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা করেছিল। কোথায় গেল সেই টাকা? কেন্দ্রের ভারী শিল্প মন্ত্রকের অধীন বানারহাটের চারটি বাগানে পাঁচমাস ধরে বেতন নেই। চা বাগানের জন্য কেন্দ্র কী করেছে, সভা থেকে এর জবাব দিন প্রধানমন্ত্রী। প্রকাশের দাবি, চা বাগানে হাসপাতাল থেকে ক্রেশ, পানীয় জল, রাস্তা, চা সুন্দরী প্রকল্পে ঘর, জমির পাট্টা যা করার সবটাই রাজ্য সরকার করছে।
ডুয়ার্সের চা বলয়ে পরপর নির্বাচনে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছে। ঊনিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি আলিপুরদুয়ারে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে জিতলেও চব্বিশে সেই লিড নেমে আসে মাত্র ৭৬ হাজারে। এরপর মাদারিহাট বিধানসভা উপ নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। তথ্য বলছে, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলা মিলিয়ে চা বাগানে ৪৮৩টি বুথ। এর মধ্যে গত লোকসভা ভোটের নিরিখে ২৪৪টি বুথে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। মাদারিহাট বিধানসভা উপ নির্বাচনের ফলে চা বাগানের একশোটি বুথের মধ্যে ৮১টিতেই লিড রয়েছে তৃণমূলের। এই পরিস্থিতিতে চা বাগানের সংগঠনকে ঘুরে দাঁড় করাতে মোদির ভাষণের দিকেই তাকিয়ে পদ্মপার্টির জেলা নেতৃত্ব। চা শ্রমিকদের জন্য তিনি নতুন কিছু ঘোষণা করবেন, যা হাতিয়ার করে বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করা যাবে, এই আশাতেই বুক বেঁধেছেন বিজেপি নেতারা।
আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশের অভিভাবক। তিনি চায়ের জেলায় আসছেন। ফলে আমাদের তো কিছু আশা থাকবেই। দেখা যাক, সভা থেকে তিনি কী ঘোষণা করেন। চা বাগান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছু ঘোষণা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। যদিও তাঁর দাবি, চা বাগানের একাধিক বিষয় রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার চা বাগানের উন্নয়নে চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু রাজ্যের কাছ থেকে সহযোগিতা মিলছে না। সেকারণে কিছু করা যাচ্ছে না।