• মেমারিতে বাবা-মায়ের গলার নলি কেটে খুন
    বর্তমান | ২৯ মে ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, মেমারি: মেমারির কাশিয়ারায় গলার নলি কেটে বাবা ও মাকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তাঁদেরই ইঞ্জিনিয়ার ছেলের বিরুদ্ধে। খুনের পর মোস্তাফিজুর রহমান (৬৫) ও মমতাজ পারভিনের (৫৫) রক্তাক্ত মৃতদেহ সে ঘর থেকে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে যায়। তারপর মৃতদেহ দু’টি রেখে সে চম্পট দেয়। যাওয়ার আগে সে বাবার মোবাইলটি তাঁর বুকের উপর রেখে যায়। পূর্ব বর্ধমানের পুলিস সুপার সায়ক দাস বলেন, বাড়িতে ওই দম্পতির ছেলে হুমায়ন কবীরও থাকত। ঘটনার পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। পরে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় কয়েকজনকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করেছে। বর্ধমান থেকে একটি বিশেষ টিম বনগাঁয় যাচ্ছে।

    এদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ঘরের খাটের বিছানার চাদর রক্তে ভিজে গিয়েছে। মেঝেতে তাজা রক্ত ছড়িয়ে রয়েছে। মৃতদেহ দু’টিকে যতদূর টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ততদূর পর্যন্ত রক্তের দাগ থেকে গিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান, বেডরুমেই ওই দম্পতিকে খুন করা হয়েছে। তারপর মৃতদেহ দরজার বাইরে পুকুর পাড়ে ফেলা হয়। বাড়িতে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সেগুলি ঘুরিয়ে রাখা হয়েছিল। ঘটনার সময়ের দৃশ্য সিসি ক্যামেরা থেকে পুলিস পায়নি। তবে বাড়ির দু’দিকে রাস্তায় একাধিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। পুলিস সেই ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করে। 

    তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ধারালো ছুরি দিয়ে ওই দম্পতির গলার নলি কাটা হয়। মমতাজ পারভিনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। দেওয়ালে ধাক্কা দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার নলি কাটা হয়। স্থানীয়রা বলেন, পরিবারটি আর্থিকভাবে যথেষ্ট সমৃদ্ধশালী। বর্ধমান শহরে লস্করদিঘিতে তাঁদের বড় বাড়ি রয়েছে। এছাড়া মেমারির কাশিয়ারার বাড়িটিও পুরনো। বাড়ির মধ্যে বড় বাগান রয়েছে। একাধিক পুকুর ও চাষের জমি রয়েছে। ওই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে। তাঁদের মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তিনি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। ছেলে হুমায়ুন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছে। দিল্লিতে একটি নামী সংস্থায় চাকরি করত। মানসিক সমস্যার কারণে পাঁচমাস ধরে দিল্লি ছেড়ে বাড়িতে থাকছিল। 

    পরিবারের সদস্যদের দাবি, হুমায়ুন মানসিক অবসাদে ভুগছিল। তার বিয়ে হলেও মাত্র ১৫দিনের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনার পর ওই দম্পতির ছেলে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তা নিয়ে প্রথম থেকেই রহস্য দানা বেঁধেছিল। মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়িতে আর্থিক অনটন ছিল না। তারপরেও এমন ঘটনায় সকলেই হতবাক। প্রতিবেশীরা বলেন, দরজা জানলা বন্ধ থাকায় কোনও আওয়াজ শোনা যায়নি। তাঁদের ছেলেকে মঙ্গলবার রাতেও দেখা গিয়েছিল। তবে বুধবার সকাল থেকেই তাকে আর দেখা যায়নি। 

    এক পুলিস আধিকারিক বলেন, খুনের ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, আততায়ী একজনই। ঘটনাস্থলে একজনের পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। ঘটনার পর থেকেই ওই দম্পতির ছেলের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাকেই প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছিল। পরে বনগাঁয় গিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষের উপর হামলা চালায় বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, মেমারিতে বাবা, মাকে খুন করার পর সে উত্তর ২৪ পরগনায় চলে গিয়েছিল।  এই খাটেই খুন হয়েছেন বাবা-মা। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)