• শান্তিনিকেতনের আতঙ্ক ‘ব্লেড ম্যান’ পুলিসের জালে, স্বস্তিতে পড়ুয়ারা
    বর্তমান | ২৯ মে ২০২৫
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের নির্জন রাস্তার আতঙ্ক ‘ব্লেড ম্যান’ অবশেষে পুলিসের জালে। বুধবার সকালে তার বাড়ি সুরশ্রীপল্লি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে শান্তিনিকেতন থানার পুলিস। ঋক সর্দার নামের কুখ্যাত ছিনতাইবাজ বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন রাস্তায় দিনের পর দিন ছিনতাই করছিল। হাতে ধারালো ব্লেড নিয়ে সে সবাইকে ভয় দেখাত।‌ এমনকী, ধরা পড়লে নিজের গলা, হাত ফালাফালা করে কাটতে শুরু করে অন্যকে ভয় দেখাত। এই কারণেই দিনের পর দিন সে অধরা ছিল। গত রবিবার সঙ্গীত ভবনের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৈত্রী মুখোপাধ্যায় ও তার মা আক্রান্ত হন ঋকের হাতে। তাতে ‌মৈত্রীর মা পাপিয়া মুখোপাধ্যায়ের ডান হাত ভেঙে যায়। মৈত্রী শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ জানালেও পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করতে গড়িমসি করে বলে অভিযোগ। এরপর মঙ্গলবারও সে ওই এলাকাতে ফের ব্লেড হাতে তাণ্ডব শুরু করে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। ‘বর্তমান’ পত্রিকার ছিনতাইয়ের সেই খবর প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে পুলিস। এরপর বুধবার সকালে পুলিসের জালে ধরা পড়ে ছিনতাইবাজ ব্লেড ম্যান। আর তাতেই স্বস্তি ফিরে পান বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ও স্থানীয় বাসিন্দারা। 

    শান্তিনিকেতনের আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ভবনের পিছনে সুরশ্রীপল্লির এলাকায় ‘পাতাখোর’ ঋকের বাড়ি। বাবা অন্যত্র থাকেন। মা পরিচারিকার কাজ করে দিনযাপন করেন। তাই ছোটবেলায় কুসঙ্গ দোষে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে ঋক। তবে ড্রাগ, পাতায় আসক্ত হওয়ার পর থেকে নেশার জন্য অল্প বয়স থেকেই চুরি ছিনতাই শুরু করে সে। শান্তিনিকেতনের সীমান্তপল্লি, পূর্বপল্লি, রতনপল্লি, গুরুপল্লি প্রভৃতি জায়গাগুলি ক্যাম্পাস সংলগ্ন হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা সেখানে মেস ও বাড়ি ভাড়া নিয়ে পড়াশোনা করেন। তবে এই জায়গাগুলি অত্যন্ত নির্জন। সন্ধ্যা হতেই একা চলাচল করতে অনেকের গা ছমছম করে। সেই অন্ধকারকেই কাজে লাগায় দুর্বৃত্তরা। এর আগে শান্তিনিকেতনের সংশ্লিষ্ট এলাকার রাস্তায় একাধিকবার ছাত্রীদের মোবাইল, ব্যাগ, টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর অধিকাংশ ঘটনাতেই যুক্ত ব্লেড ম্যান ঋক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, ঋক অত্যন্ত বেপরোয়া। হেফাজতেও নিজের মাথা ঠুকে ফাটিয়ে নেয়। নিজেকে রক্তাক্ত করে। ওকে সামলানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। 

    উত্তর সীমান্তপল্লির বাসিন্দা তিমির পটুয়া, সমীর পটুয়া বলেন, ‘হাতে ব্লেড নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে বহু ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে এই দুষ্কৃতী। তাকে ধরতে গেলেই অত্যন্ত বেপরোয়া ভাবে নিজের গলা, হাত ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলে। সে মারা গেলে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়। এমনকী, ইট তুলেও মারতে আসে। তাই তাকে ধরতে সকলেই ভয় পায়। মৈত্রী ও তার মায়ের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, তারপর থেকে ছাত্রীরা অত্যন্ত ভীত ও সন্ত্রস্ত। কারণ, এলাকাটি বিশ্বভারতীর শিক্ষাভবন লাগোয়া হওয়ায় বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রীরা ল্যাবরেটরি থেকে অনেক রাত করে বাড়ি ফেরেন। তাঁদের সঙ্গে ল্যাপটপ ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী থাকে। ‌সেগুলি ছিনতাই করলে তাঁদের ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওর গ্রেপ্তারে আমরা স্বস্তি ফিরে পেয়েছি।’ অভিযুক্তকে ১৪ দিনের জেল হেফাজত দিয়েছে বোলপুর আদালত। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)