বাংলাদেশে গোরু পাচারে কারবারিদের নয়া রুট তারাপীঠ, রামপুরহাটে অভিযান
বর্তমান | ২৯ মে ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: সামনে কুরবানি। তার আগে গোরু পাচারে মরিয়া হয়েছে উঠেছে অবৈধ কারবারিরা। কখনও পিকআপ ভ্যান, কখনও মোটরভ্যানে গোরু বেঁধে অমানবিকভাবে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মুর্শিদাবাদে। সেখান থেকে সুযোগ বুঝে পাচার করা হচ্ছে বাংলাদেশে। এই পাচারের নয়া রুট হিসাবে কারবারিরা বেছে নিয়েছে তীর্থভূমি তারাপীঠের রাস্তা। পর্যটকদের ভিড় ঠেলে থানার সামনে নিয়ে একের পর এক গোরুবোঝাই যানবাহন বেসিক মোড় হয়ে চলে যাচ্ছে মুর্শিদাবাদে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রামপুরহাটের মনসুবা মোড়ে তারাপীঠ যাওয়ার রাস্তার উপর অভিযান চালায় জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ। আটক করা হয় গোরুবোঝাই চারটি পিকআপ ভ্যান। উদ্ধার হয় ২৭টি বড় সাইজের গোরু। চালক ও পাচারকারী মিলিয়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সকলেরই বাড়ি মুর্শিদাবাদে। জেলা ডিএসপি ডিইবি স্বপনকুমার চক্রবর্তী বলেন, গোরুগুলিকে মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। আইনি পদক্ষেপের জন্য রামপুরহাট থানাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। রামপুরহাট থানার পুলিস জানিয়েছে, নির্দিষ্ট ধারায় কেস শুরু হয়েছে।
গোরু পাচার মামলায় সিবিআই গ্রেপ্তার করেছে একাধিক ‘রাঘব বোয়াল’কে। যা নিয়ে তোলপাড় হয় গোটা রাজ্য। গোরু পাচার চক্রের চাঁইরা একে একে গ্রেপ্তার হতেই রাঘববোয়ালরা সেঁটে গিয়েছে। কিন্তু এই পাচারের কাজে যারা কেরিয়ারের কাজ করত, তারাই এখন ময়দানে খেলছে। এক হাট থেকে অন্য হাটে গোরু নিয়ে যাওয়ার নাম করে তারাই এখন ওপার বাংলায় গোরু পাচারের ত্রাস হয়ে উঠেছে।
সূত্রের খবর, গোরু পাচার নিয়ে হইচই শুরু হতেই জেলার সর্ববৃহৎ ইলামবাজার সুখবাজার হাটে কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। তার বদলে রমরমা বেড়েছে জেলার অন্যান্য পশুহাটগুলিতে। ঝাড়খণ্ড সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে গোরু এনে সেই হাটগুলিতে জড়ো করা হচ্ছে। আগে লরিতে চাপিয়ে গোরু মুর্শিদাবাদে পাচার করা হতো। এখন অবশ্য পুলিসের নজর এড়াতে মোটর ভ্যান, পিকআপ ভ্যানে পাঁচটা, আটটা করে গোরু আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে পাচারের কাজ চলছে। গোরু পাচার নিয়ে সিবিআই তৎপর হওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট কোনও রুট ব্যবহার করছিল না পাচারকারীরা। বিভিন্ন গ্রামের রাস্তাকে এই পাচারের জন্য বেছে নিচ্ছিল তারা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে মোটরচালিত ভ্যান। বর্তমানে মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে গোরু পাচারের জন্য রামপুরহাট ও তারাপীঠ হয়ে উঠছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মুর্শিদাবাদ হয়ে যে সমস্ত গোরু সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তার অধিকাংশই রানিগঞ্জ মোড়গ্রাম ১৪ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে রামপুরহাট ও তারাপীঠের রাস্তার উপর দিয়ে।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের হরিপুর, মালুতি, মহিষাদহরী, মাসানিয়া, জগৎপুর, রামগড় সহ একাধিক এলাকা থেকে প্রথমে গোরু নিয়ে আসা হয় রামপুরহাট সীমানা লাগোয়া সরেসডাঙায়। সেখান থেকে রামপুরহাট দুমকা রোড ধরে গোরুগুলিকে যানবাহনে চাপিয়ে আন্তঃরাজ্য সীমানা পেরিয়ে এখানকার গোরুর হাটগুলিতে আনা হচ্ছে। পরে সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে ওপার বাংলায় চলে যাচ্ছে। গোরু পাচারের জন্য যে শুধুমাত্র রাতের অন্ধকারকেই বেছে নেওয়া হচ্ছে, এমনটা নয়। দিনের বেলাতেও নিশ্চিন্তে চলছে পাচার। এলাকাবাসীর দাবি, প্রতি বৃহস্পতিবার রামপুরহাটে পশুহাট বসে। ফলে সপ্তাহের এই দিনটিতে গোরু পাচার কমবেশি চলে। এখন কুরবানির সময় তা ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে। সূত্রের দাবি, এই গোরুগুলি বীরভূমের মুর্শিদাবাদ সীমানায় জড়ো করা হয়। পরে সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে পাচার করা হয়। কুরবানির সময় বাংলাদেশে গোরুর চাহিদা বাড়ে। তাতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে পাচারকারীরা। যদিও পুলিসের দাবি, গোরু পাচার রুখতে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।