জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় ১৫ বছর পার, এখনও খোঁজ নেই ২৩ জনের
বর্তমান | ২৯ মে ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডের পর ১৫ বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু আজও মানুষের মনে টাটকা সেই ভয়াবহ স্মৃতি। রেল লাইনের ধারে দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে থাকা রেলের বগিগুলি সেই ভয়াবহতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে আজও। সেইসব বগির গা থেকে রক্তের দাগ ফিকে হলেও, স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের মনে কষ্টের দাগ আজও টাটকা। কারণ, জ্ঞানেশ্বরী রেল দুর্ঘটনার ১৫ বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও নিখোঁজ ২৩ জন যাত্রী। তাঁদের দেহ না মেলায় ডেথ সার্টিফিকেটও পাননি পরিবারের সদস্যরা। এর ফলে তাঁদের নিকট পরিজনরা রেলের চাকরিও পাননি। নানা সমস্যার মধ্যে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। আইনজীবীর কথায়, ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল। বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তৎকালীন সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মৃতের পরিবারের সদস্যরা চাকরি ও আর্থিক সাহায্য পেয়েছে। কিন্তু নিখোঁজ ব্যক্তিদের আর কোনও খোঁজ মেলেনি। এমনকী ১৫ বছর ধরে নিখোঁজ থাকার পরেও তাঁদের মৃত বলে ঘোষণাও করা হয়নি। পরিবারগুলির সদস্যরা আইনের দ্বারস্থ হলেও, এখনও সুরাহা হয়নি।
এদিন সাউথ ইস্টার্ন রেলের (খড়গপুর ডিভিশন) সিনিয়র ডিসিএম নিশান্ত কুমার বলেন, যে কোনও দুর্ঘটনাই দুঃখজনক। দুর্ঘটনা এড়াতে রেলের তরফে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রেলে কোনও দুর্ঘটনা হলে নিয়ম মেনে তদন্ত হয়। মেদিনীপুর আদালতের আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, প্রায় ২৩ জনের হদিশ এখনও মেলেনি। এই পরিবারগুলো বড় সমস্যার মধ্যে রয়েছে। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। বহু মানুষ মামলা করেছেন। তার নিষ্পত্তি কবে হবে কেউ জানে না। ডেথ সার্টিফিকেট না পাওয়ায় পরিবারগুলো ইন্স্যুরেন্স, চাকরি কিছুই পাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, হাওড়া জেলার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ আটা এই দুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁরও দেহ পাওয়া যায়নি। তাঁর পরিবার খুবই সমস্যার মধ্যে পড়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৭ মে রাত দেড়টা নাগাদ ঝাড়গ্রামের সরডিহার রাজাবাঁধ এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। খড়গপুর ছেড়ে প্রায় ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার গতিবেগে যাচ্ছিল হাওড়া থেকে মুম্বইগামী আপ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। দ্রুতগতিতে থাকা ট্রেনের চালক লাইনচ্যুত হওয়ার বিষয়টি প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন। যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাতে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক ওই সময়ে ডাউন লাইনে উল্টোদিক থেকে একটি মালগাড়ি চলে আসে। এরফলে ভয়ানক সংঘর্ষ হয়। যার ফলশ্রুতি, জ্ঞানেশ্বরীর প্রায় ১৪৮ জন যাত্রীর মৃত্যু। বিপুল সংখ্যক যাত্রী জখম হন। কয়েকজনের অঙ্গহানিও হয়। সেনাবাহিনী, রেল পুলিস তো বটেই, সাধারণ মানুষও উদ্ধারকার্যে নেমে পড়েন। ঘটনাস্থলেই সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
জানা গিয়েছে, সেদিনের জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসে ছিলেন সুরেন্দ্র সিংয়ের স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান। তাঁদের বাড়ি কলকাতার ডালহৌসি এলাকায়। তাঁরা ছত্তিশগড়ে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। তাঁর স্ত্রী নীলম সিং ও পুত্রসন্তান রোহিত সিংয়ের মৃতদেহের খোঁজ মেলেনি। এদিন সুরেন্দ্রবাবু বলেন, আজও স্ত্রী ও এক ছেলের হদিশ পেলাম না। তাঁদের ডেথ সার্টিফিকেট আজও পাইনি। রেলের থেকে কোনও সহযোগিতা পাইনি।