• চিকেন’স নেক ঘেঁষে বাংলায় জোড়া কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রীর
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৯ মে ২০২৫
  • রাত পোহালেই বাংলা সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার চিকেন নেক ঘেঁষে জোড়া কর্মসূচি সারবেন মোদী। আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডের কর্মসূচিস্থলে পৌঁছনোর আগে ত্রিভূজাকৃতি আকাশপথে বাংলা সফর করবেন তিনি। তাঁর এই সফর ঘিরে একদিকে বিজেপির অন্দরমহলে যেমন উৎসাহ বাড়ছে, তেমনই আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও তাঁর এই বঙ্গ সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, তিনি এমন সময়ে উত্তরবঙ্গ সফরে আসছেন, যখন ভারতের ‘চিকেন নেক’ ঘেঁষে বাংলাদেশ সরকার চিনের পরামর্শে বায়ুসেনার ঘাঁটি তৈরির প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। আবার ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্য ও প্রয়োজনীয়তা এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রচারে ভারতীয় জনপ্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক সফরে বেরিয়েছেন।

    দুপুর ২টো নাগাদ আলিপুরদুয়ারে পৌঁছনোর কথা প্রধানমন্ত্রীর। প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রথমে প্রশাসনিক মঞ্চে যাবেন তিনি। দুপুর ২টো ১৫ নাগাদ সেই মঞ্চ থেকে আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার জেলার জন্য ‘নগর গ্যাস সরবরাহ’ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক জানিয়েছে, ১ হাজার ১০ কোটি টাকার ওই প্রকল্প। তাতে দুই জেলায় আড়াই লক্ষ পরিবারকে পাইপলাইনের মাধ্যমে রান্নার গ্যাস সরবরাহ করা হবে। শতাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকেও পাইপলাইনে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করার বন্দোবস্ত করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটির আওতায় ওই দুই জেলায় ১৯টি সিএনজি স্টেশনও তৈরি হবে, যাতে সিএনজি চালিত যানবাহনে জ্বালানি ভরার সমস্যা কমে।

    উত্তরের এই দুই জেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই সব প্রকল্পের শিলান্যাসকে ২০২৬ সালের নির্বাচনে প্রচারের ‘হাতিয়ার’ করার চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। এদিন ৩টে নাগাদ জনসভার মঞ্চে পৌঁছবেন মোদী। সেই মঞ্চে মোদীর ভাষ্য কী হতে চলেছে, গোটা রাজ্যের বিজেপি কর্মীরা সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। প্যারেড গ্রাউন্ডে মোদীর জনসভার যাবতীয় ব্যবস্থাপনা দেখভাল করছেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মণ এবং আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা। আলিপুরদুয়ার ছাড়াও জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, শিলিগুড়ি ও দার্জিলিং সাংগঠনিক জেলা থেকে বড় সংখ্যায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মোদীর সভায় নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে। দুই দিনাজপুর এবং মালদহ থেকেও বেশ কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থক আলিপুরদুয়ারে পৌঁছবেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। এই সফরে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের জন্য বিশেষ কোনও বার্তা দিচ্ছেন কিনা, তা নিয়ে উত্তরবঙ্গবাসীদের মধ্যে কৌতূহল দেখা গিয়েছে।

    অন্যদিকে মোদির সফরের একদিন আগেই বুধবার রাজ্যে শাসক-বিরোধী রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। মোদীর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে রাজ্যের ‘দুর্নীতি এবং প্রশাসন’ নিয়ে তৃণমূলের সমালোচনা করতেই রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার মোদী কী বলেন, তা দেখে পাল্টা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। যদিও প্রধানমন্ত্রীর পোস্টের পর পাল্টা জবাব দিয়েছে বাংলার শাসকদল। একটি পরিযায়ী পাখির ছবি দিয়ে সর্বভারতীয় তৃণমূলের ‘এক্স’ হ্যান্ডল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বাংলার ন্যায্য পাওনা আটকে রাখা প্রসঙ্গে।

    বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাগডোগরা বিমানঘাঁটিতে নামবে প্রধানমন্ত্রীর বিমান। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে সোজা সিকিমে রওনা দেবেন তিনি। কারণ পাহাড়ি রাজ্য সিকিম এখন ভারতভুক্তির ৫০ বছর উদ্‌যাপন করছে। তাই দু’দিক দিয়ে চিন-পরিবেষ্টিত সিকিম সফর প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সিকিমে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি উন্মোচন সহ একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন মোদী। এরপর হেলিকপ্টারে আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছবেন তিনি। অর্থাৎ চিকেন’স নেকের সামান্য উত্তরে প্রধানমন্ত্রী নামছেন। তার পরে তাঁর হেলিকপ্টার নেপাল, চিন, ভুটান এবং বাংলাদেশের মাঝে ত্রিভুজাকার যাত্রাপথে চক্কর দেবেন।

    উল্লেখ্য, এক পাশে চিকেন’স নেক এবং অন্য পাশে ‘সেভেন সিস্টার্স’ অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য। ভারতের এই দু’টি ভূভাগের কথা সম্প্রতি কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নেতাদের মুখে বার বার শোনা যাচ্ছে। দু’টি ভূ-ভাগেই ভারতের ‘কর্তৃত্ব’ এবং ‘নিয়ন্ত্রণ’ কতটা ‘দৃঢ়’ ও ‘মসৃণ’, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরসূচিতে সেটি নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে যথেষ্ট জল্পনা শুরু হয়েছে। দেশের বর্তমান সন্ধিক্ষণ নিয়ে কথা বলতে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর স্থানীয় আবেগকে কিছুটা হলেও স্পর্শ করেছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)