• দেবাশিস-অনিকেত-আসফাকুল্লাকে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ, নাহলে মোটা টাকা জরিমানা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩০ মে ২০২৫
  • আরজি কর আন্দোলনের অন্যতম প্রধান তিন মুখ দেবাশিস-অনিকেত-আসফাকুল্লাকে অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিল স্বাস্থ্য ভবন। ‘গ্রাম বিমুখ’ বলে অভিহিত এই তিন জুনিয়র ডাক্তার অবিলম্বে নির্দেশ না মানলে তাঁদের মোটা টাকা জরিমানা গুনতে হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

    স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, হাসপাতালে সিনিয়র রেসিডেন্ট পদটি ‘বন্ড’ পোস্টিং। স্নাতকোত্তর পরীক্ষার পর সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসাবে যোগ দিলে তিন বছরের বন্ড থাকে। বন্ড না মানলে, কিংবা তিন বছরের আগে বন্ড অমান্য করে বেরিয়ে এলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে মোটা টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। তিন বছরে এই টাকার অঙ্কের পরিমাণ মোট ৩০ লক্ষ টাকা! অর্থাৎ, আসফাকুল্লা-অনিকেত যদি কাজে যোগ না দেন, তা হলে সর্বাধিক ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে। জানা গিয়েছে, শেষমেশ যদি নির্দেশ মেনে কাজে যোগ না দেন তা হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে পারে আসফাকুল্লা, অনিকেতদের। কারণ, আগামী দিনে কোনও কলেজে অধ্যাপনা করতে গেলেও চিকিৎসকদের অন্তত এক বছর সিনিয়র রেসিডেন্ট হিসাবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক।

    প্রসঙ্গত আসফাকুল্লা নাইয়া, অনিকেত মাহাতো এবং দেবাশিস হালদারের পছন্দ কলকাতা ও শহরাঞ্চলের আশপাশের হাসপাতাল। কিন্তু তাঁদের পোস্টিং দেওয়া হয়েছে গ্রামে। সেজন্য তাঁদের কাজে যোগ দিতে যথাক্রমে পুরুলিয়া, মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরের হাসপাতালে যেতে হবে। তাঁরা সেই নির্দেশ না মানায় ইতিমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়েছে নেটনাগরিকদের মধ্যে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কোন মধু রয়েছে এখানে? যার জন্য শহর ছেড়ে যেতে চাইছেন না এই তিন চিকিৎসক।’

    মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যদপ্তরের নতুন বিজ্ঞপ্তিতে সিনিয়র রেসিডেন্টদের ‘নিয়মমাফিক’ বন্ড পোস্টিংয়ের ঘোষণা করা হয়েছে। সেই ‘পোস্টিং’-এ আর সকলে কাজে যোগ দিলেও ক্ষুব্ধ তিন ডাক্তার, দেবাশিস হালদার, আসফাকুল্লা নাইয়া, অনিকেত মাহাতো বুধবার ফের স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে ধর্নায় বসে পড়েন। কিন্তু সেখানে তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ‘আগে কাজে যোগ দিন।’ তা সত্ত্বেও নাছোড়বান্দা এই তিন জুনিয়র ডাক্তার। দেবাশিস হালদারের আজব যুক্তি, ‘আমাদের লোকেরা রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব।’

    কিন্তু কেন কাজে যোগ দিচ্ছেন না এই তিন চিকিৎসক? এ বিষয়ে জানা গিয়েছে, বামপন্থী মনোভাবাপন্ন এই তিন ডাক্তারের মগজ ধোলাই করছেন অতি বাম কিছু সিনিয়র চিকিৎসক। তাঁদের উসকানিতেই বেঁকে বসেছেন আরজিকর কাণ্ডের এই প্রতিবাদী জুনিয়ররা। তাঁরা মুখে ন্যায়ের কথা বলে আরজিকর আন্দোলন করলেও এখন নিজেরা সেই ন্যায় মেনে গ্রামের মানুষের সেবা না করে উল্টে নিজেদের সুবিধা ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

    তিন চিকিৎসকের এহেন আচরণে সরব হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। এই তিন চিকিৎসকের কাছে তাঁর প্রশ্ন, ‘আপনারা তো মানুষের পাশে থাকবেন বলে শপথ নিয়েছিলেন, এখন কলকাতার আশপাশে ঘুরঘুর করছেন। দূরের মানুষকে পরিষেবা দিতে কী অসুবিধা?’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)