• বর্ধমানের হাসপাতালে জন্ম হল 'মৎস্যকন্যা'র, কী কারণে জন্মায় এই 'মারমেইড বেবি'? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
    আজকাল | ৩০ মে ২০২৫
  • বিভাস ভট্টাচার্য: চিকিৎসা জীবনের ৩০ বছরেও এই ধরনের শিশু তাঁর হাতে ভূমিষ্ঠ হয়নি। প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েই গিয়েছিলেন তিনি এবং অপারেশন থিয়েটারের সঙ্গীরা। ধীরে ধীরে মায়ের গর্ভ থেকে শিশুটি বের করে আনেন হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আর এন মণ্ডল। প্রায় মৎস্যকন্যার মতো দেখতে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুটি একটি কন্যাসন্তান। যার কোমরের নীচ থেকে দুটি পা একেবারে জোড়া লাগানো। দুটি পায়ের পাতা এমনভাবে যুক্ত যা দেখলে মাছের লেজের শেষাংশ বলে মনে হয়। মঙ্গলবার গভীররাতে পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে জন্ম হয় এই শিশুটির। যদিও শিশুটি শেষপর্যন্ত বাঁচেনি। বুধবার ভোররাতে মারা যায়। 

    ডা: আর এন মণ্ডল বলেন, 'এতবছর ধরে চিকিৎসা করছি। কিন্তু এই ধরনের অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। আমরা শিশুটিকে বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত সে বাঁচেনি।' 

    এই ধরনের উদাহরণ আর আছে কিনা সে বিষয়ে রাজ্যের অন্যতম স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সুভাষ বিশ্বাস বলেন, 'কয়েক লক্ষের মধ্যে এইরকম কিছু পাওয়া হয়ত যেতে পারে। আমার জীবনে এর আগে আমি একবার এরকম একটি ঘটনার কথা শুনেছিলাম। এই বিষয়টিকে বলা হয় 'মারমেইড সিনড্রোম'।' এই ধরনের শিশু জন্ম নেওয়ার পিছনে কারণ কী? দুই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, মূলত যে কারণগুলোকে ধরা হয় তার মধ্যে একটি বড় কারণ হল রক্তের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন। যার জন্য তাঁদের সন্তানের জিনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং এই ধরনের সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে। ফলে বিয়ের আগে খুব ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে দেখা উচিত পাত্র বা পাত্রী কোনওভাবে পরস্পর পরস্পরের আত্মীয় কিনা।

    দ্বিতীয়ত আরও একটি বিষয় হল অনেকেই গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই গর্ভের ঘন ঘন এক্স রে করান। এক্স রে'র রেডিয়েশন থেকে গর্ভস্থ শিশুর চরম ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় যদি কোনো শারীরিক সমস্যা হয় তবে অনেক প্রসূতি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নিজে নিজে ওষুধ খেয়ে নেন। যেটা একটা বড় কারণ। এর পাশাপাশি মা যদি ডায়াবেটিস রোগে ভোগেন সেক্ষেত্রেও গর্ভস্থ শিশুর ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তবে 'জিন মিউটেশন'টা কিন্তু একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ দিক।' 

    এই শিশু জন্মের পর কেন শেষপর্যন্ত বেঁচে থাকে না? ডাঃ সুভাষ বিশ্বাস এবং ডাঃ আর এন মণ্ডল বলেন, 'এদের ক্ষেত্রে শরীরের বর্জ্য যেমন মল বা মূত্র ত্যাগ করার মতো শরীরে কোনও ছিদ্র থাকে না। শরীরের নিম্নাংশ পুরোটাই থাকে পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে জোড়া। কোনও প্রাণীর শরীরে যদি এই ব্যবস্থা না থাকে তবে তার পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।'
  • Link to this news (আজকাল)