নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: সিপিএম পরিচালিত সমবায় সমিতিতে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ উঠল পুরুলিয়ার পুঞ্চায়। পুঞ্চা ব্লকের জামবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের বানসা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বাসিন্দারা। এনিয়ে বৃহস্পতিবার এলাকায় পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান আমানতকারীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কেন্দা থানার পুলিস। বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বিক্ষোভ তোলেন। বিষয়টিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি তুলে অবিলম্বে সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
জামবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত সিপিএমের অন্যতম ঘাঁটি। তৃণমূলের ভরা বাজারেও এই পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে রয়েছে। বানসা সমবায়ও জন্মলগ্ন থেকেই সিপিএমের দখলে। মাস দুয়েক আগেও সমবায়ে নির্বাচন হয়। তাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় সিপিএম। আমানতকারীদের অভিযোগ, সমবায়ে তাঁদের বহু টাকা গচ্ছিত রয়েছে। কিন্তু, সেই টাকা তাঁদের দেওয়া হচ্ছে না। আমানতকারীদের আরও অভিযোগ, দু’বছরের বেশি সময় ধরে সমবায় নিয়মিত খোলে না। মাসে এক দু’দিন খোলে। সেই দিনগুলিতেও গচ্ছিত টাকা তুলতে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এনিয়ে আমানতকারীরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছেন। যদিও টাকা মেলেনি। বৃহস্পতিবার আমানতকারীদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে তাঁরা অবরোধে শামিল হন।
আমানতকারীদের অন্যতম সনাতন রজক বলেন, সমবায়ে আমার প্রায় ১০ লক্ষ টাকা জমা আছে। টাকা পয়সা তুলে ঘর করব ভাবছি। কিন্তু, টাকা পাচ্ছি না। আমাদের ঘুরিয়েই যাচ্ছে। টাকা দিচ্ছে না। পিন্টুলাল মাহাত বলেন, আমার প্রায় দু’লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা এই সমবায়ে জমা আছে। বহু পরিশ্রম করে এই টাকা জমিয়েছি। টাকা পয়সা না পেয়ে চাষের কাজ শুরু করতে পারছি না। গত ছ’মাসে মাত্র তিন থেকে চারবার খুলেছে এই সমবায়। যতবারই টাকা তুলতে এসেছি, ততবারই ঘুরিয়ে দিয়েছে। শুধু আমানতকারীরা নন, যাঁরা ঋণ নিয়েছেন, তাঁরাও ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। জামবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রধান অসিত মাহাত বলেন, সমবায়ে টাকা পয়সার লেনদেন সংক্রান্ত একটি সমস্যা চলছে। বানসা সমবায়ের এক পদাধিকারী পরমানন্দ মুর্মু বলেন, এদিনই আমরা একটি বৈঠক করেছি। কার কত টাকা জমা আছে, এনিয়ে আগামী মাসের ২০ তারিখের মধ্যেই সমস্ত তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করছি। কীভাবে টাকা শোধ করা হবে, তা বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করব। আশা করছি তারপর আমানতকারীদের কোনও সমস্যা থাকবে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগে ওই সমবায়ের ম্যানেজার আত্মহত্যা করেছিলেন। তারপর থেকেই সমবায় কার্যত বন্ধ! তবে, ম্যানেজার কেন আত্মহত্যা করেছিলেন, তা নিয়ে রহস্য রয়েছে। আমানতকারীদের দাবি, সমবায়ে ব্যাপক আর্থিক তছরুপ হয়েছে। এনিয়ে পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি কৃপাসিন্ধু(ধরম) বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ওই সমবায়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকার হিসেবে গরমিল রয়েছে। তছরুপের কারণ সিপিএম নেতারাই ভালো বলতে পারবেন। ওই সমবায়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে। বাসিন্দারা ঋণ পাচ্ছেন না। সমবায়ের কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না।