• কয়েকদিন ধরেই কোমরে ছুরি গুঁজে ঘুরত হুমায়ুন, হিমাচলপ্রদেশে গিয়েছিল কেন? তদন্তে পুলিস
    বর্তমান | ৩০ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: মেমারির কাশিয়ারার দম্পতি মোস্তাফিজুর রহমান ও মমতাজ পারভিনের অর্থের অভাব ছিল না। শুধু মেমারি শহর নয়, বর্ধমানেও তাঁদের বড় বাড়ি রয়েছে। সেই বাড়ির ছেলে হুমায়ুন কবীর। সে যখন যা চাইত বাড়ির লোকজন সেটাই হাতের কাছে পৌঁছে দিত। সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর পরিবারের লোকজন অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন। ছেলে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তার বিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু বিয়ের মাত্র ১৫দিনের মধ্যে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। হুমায়ুনের জীবনে যেন এক ঝড় বইতে থাকে। আচমকাই সে চাকরি ছেড়ে রওনা দেয় হিমাচলপ্রদেশে। বহু খোঁজাখুজি করে পুলিস তাকে উদ্ধার করে। কিন্তু আগের হুমায়ুন আর এখনকার হুমায়ুনের মধ্যে যেন কোনও মিল পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকজন। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হিমাচলপ্রদেশ থেকে উদ্ধারের সময় দেখা যায়, বড় দাড়ি রেখেছে। ইঞ্জিনিয়ারের গ্ল্যামারও উধাও। কথায় কেমন যেন অসঙ্গতি। কখন কী বলছে সেটা সে নিজেই জানে না। ছেলেকে আর বাইরে রাখার ঝুঁকি বাবা-মা নেননি। ঘরে রেখে‌ই তার চিকিৎসা চলছিল বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছিলেন। তবে সে কেন হিমাচলপ্রদেশ গিয়েছিল? সেখানে কোথায় ছিল, সেসব প্রশ্নের উত্তর এখনও প্রতিবেশীরা পাননি। তাঁরা বলেন, গত শুক্রবার থেকে সে সবসময় কোমরে ছুরি বেঁধে রেখেছিল। তার বাবা অনেকবার তাকে সেটি অন্যত্র রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে তা শোনেনি। তার বাবা ছেলেকে বোঝানোর জন্য প্রতিবেশীদের অনুরোধ করেন। কিন্তু সে কারও কথাই শোনেনি। 

    এক প্রতিবেশী বলেন, মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময়ও ও ছুরি রাখত। তা দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। কোমর থেকে বের করে সেটি সে কয়েকজনকে দেখেয়েছিল। এক প্রতিবেশী বলেন, মানসিক সমস্যা থাকায় ওর সঙ্গে আগ বাড়িয়ে কেউ কথা বলতে যেত না। তবে ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে তার বাবা এবং মা ভয় পেয়েছিলেন। তাঁরা সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতেন। ছেলে বাইরে বেরিয়ে কারও সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে। এই আশঙ্কায় তাকে তাঁরা একা ছাড়তেন না। বাড়ির বাইরে গেলে তার সঙ্গে কেউ না কেউ থাকতেন। এক ছেলে হওয়ায় বাবা-মা অত্যন্ত ভালোবাসতেন। সেই ছেলেই এমন কাণ্ড করবে সেটা কেউই ভাবতে পারেনি। 

    পুলিস জানিয়েছে, সে শুধু বাবা-মাকে নৃশংসভাবে খুন করে থেমে থাকেনি। সে সোজা বনগাঁ পৌঁছে যায়। সেখানে এতিমখানায় ঢুকে ছুরি দিয়ে কয়েকজনকে জখম করে। জেরার সময় থানার মধ্যে সে পুলিসকেও ধমক দিতে থাকে। পুলিস আধিকারিকদের সামনে সে বলতে থাকে, আমি গরিবদের সেবা করতে চাই। তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও। আমার বাবা এবং মা গরিবদের সহ্য করতে পারে না। সেই কারণেই ওদের মেরে ফেলেছি। হুমায়ুনের আত্মীয়রাও বলছেন, গরিবদের প্রতি তার টান ছিল। বেতনের একটা অংশ সে গরিবদের বিলি করে দিত। ধর্মের প্রতি তার দুর্বলতা ছোট থেকেই ছিল। নিয়ম মেনে ধর্মীর আচার পালন করত। সেই ছেলেই খুনি হয়ে উঠতে পারে, সেটা ধারণার বাইরে ছিল। 
  • Link to this news (বর্তমান)