• সোশ্যাল মিডিয়ায় নৃশংস খুনের ভিডিও দেখত ধৃত হুমায়ুন কবীর
    বর্তমান | ৩০ মে ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: সারারাত ধরে ল্যাপটপে নৃশংসতার ভিডিও দেখত মেমারির হুমায়ন কবীর। ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করার দৃশ্য ছিল তার অন্যতম প্রিয়। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন নৃশংসতার ভিডিও অনলাইনে সে দেখত। দিনের বেশিরভাগ সময় সে ঘুমিয়ে থাকত। রাতে খাওয়ার পর নিজের ঘরে ঢুকে ল্যাপটপ চালু করত। ঘরের দরজা লাগিয়ে রাখত। তবে সে শুধু নৃশংসতার ভিডিও দেখার জন্য রাত জাগত নাকি, কেউ অনলাইনে কেউ তার মগজধোলাই করত, সেটাও পুলিস তদন্ত করে দেখছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হুমায়ুন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করায় সে টেকনিক্যাল বিষয়েও পারদর্শী ছিল। বাবা-মাকে নৃশংসভাবে খুন করার পর সে নিজের মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিল। এমনকী, সোশ্যাল মিডিয়ায় তার সমস্ত অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ঘরে থাকা সিসি ক্যামেরাগুলিও কার্যত অকেজো করে দিয়েছিল। যাদবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর সে ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে দিল্লিতে একটি নামী সংস্থায় চাকরি পেয়েছিল। সে বেতনের টাকার একাংশ দুঃস্থদের দান করত। তার খুব বেশি বন্ধু ছিল না। দিল্লিতেও সে কাজের ফাঁকে ল্যাপটপে ভিডিও দেখেই সময় কাটাত। 

    ধৃত হুমায়ুনের প্রতিবেশী পিন্টু শেখ বলেন, শান্ত ছেলেটা এতটা নৃশংস হয়ে উঠবে, তা কোনওদিনই ভাবতে পারিনি। ও পাড়ায় কারও সঙ্গে সেভাবে বিবাদে জড়ায়নি। সবার সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলত। কিন্তু দিল্লি থেকে কাজ ছেড়ে আসার পর তারমধ্যে অস্বাভাবিকতা দেখা গিয়েছিল। ঘর থেকে সেভাবে বেরত না। বাবার সঙ্গে মসজিদে যেত। এছাড়া অন্য কোথাও সে আড্ডা দিত না। প্রতিবেশীরা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ তার মগজধোলাই না করলে এমনটা হতে পারে না। পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, এত কিছুর পরও তাকে অনুতপ্ত দেখা যায়নি। সে বারবার বলতে থাকে ‘আমাকে ছেড়ে দাও। গরিবদের সেবা করব। ওদের বাঁচাতে হবে।’

    পুলিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে নামাজ পড়ে আসার পর বাড়ি থেকে আর বের হয়নি। রাতে খাওয়ার পর সে নিজের ঘরে চলে যায়। ছেলে মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় বাবা-মা ভিতর থেকে দরজা লক করতেন না। হুমায়ুনকে কয়েক মাস ধরেই স্বাভাবিক ছন্দে ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। সারা রাত যাতে সে না জেগে থাকে তারজন্যও বাবা তাকে বোঝাতেন। কিন্তু লাভ হয়নি। তার ল্যাপটপ বা মোবাইলে কাউকে হাত দিতে দিত না। কেউ তা দেখার চেষ্টা করলে সে রুষ্ট হতো। প্রতিবেশীরা বলেন, আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী পরিবার। অনটন কোনওদিনই ছিল না। হুমায়ুনকে তার বাবা-মা বর্ধমানে নিজেদের লস্করদিঘির বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করিয়েছেন। হুমায়ুন প্রতিষ্ঠিতও হয়েছিল। কিন্তু তার এই পরিণতি হবে সেটা কেউই ভাবতে পারেননি।
  • Link to this news (বর্তমান)