• তমলুকের তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ
    বর্তমান | ৩০ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: তমলুক শহর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা দলের দাপুটে নেতা দিব্যেন্দু রায়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করলেন কোলাঘাটের এক যুবতী। গত বছর ২২অক্টোবর তমলুক শহরে ১০নম্বর ওয়ার্ডে পদুমবসানে ভাড়াবাড়িতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। তমলুক থানার পুলিস অভিযোগ না নেওয়ায় ওই যুবতী আদালতের দ্বারস্থ হন। পূর্ব মেদিনীপুরের সিজেএম কোর্টের নির্দেশে ২৫মে ওই নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে দিব্যেন্দু বলেন, ওই যুবতী আগের একটি মামলায় সাহায্যের জন্য বারবার আমায় ডাকতেন। তাঁর ভাড়াবাড়িতে আমায় ডেকে পাঠাতেন। আমাকে ফাঁসানোই টার্গেট ছিল। সেটা আমি জানতে পারিনি। আমি তাঁর পুরনো মামলায় সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। ধর্ষণের অভিযোগ মিথ্যা। পুলিস জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।

    উল্লেখ্য, ওই যুবতী এক সময় বিজেপি নেত্রী ছিলেন। তমলুক শহরের এক বিজেপি নেতা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেন বলে অভিযোগ। বিয়ের জন্য চাপ দিতেই তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এনিয়ে ওই নেত্রী বিজেপির একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। তাঁর দায়ের করা মামলায় কয়েকজন বিজেপি নেতা জেলও খেটেছেন। ওই সময় শাসক দলের পক্ষ থেকে নিগৃহীতা যুবতীর পাশে দাঁড়িয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হয়। রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রতিনিধি দল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এই অবস্থায় বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

    ওই যুবতী তমলুক শহরে ১০নম্বর ওয়ার্ডে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। অভিযোগ, ২০২৪সালে ২২অক্টোবর তমলুক শহর তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা দিব্যেন্দুবাবু ভাড়াবাড়িতে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন। অভিযোগকারী ওই যুবতী থানায় জানিয়েছেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ অভিযুক্ত নেতা তাঁকে ফোন করেন। পুরনো মামলার বিষয়ে আলোচনা করার অজুহাতে তিনি ভাড়া বাড়িতে আসেন। ভাড়াবাড়ির মালিক তাঁকে ভিতরে ঢুকতে নিষেধ করার পরও হুমকি ধমকি দিয়ে ঘরের মধ্যে যান। সেই সময় তাঁকে ধর্ষণ করার পাশাপাশি আপত্তিকর ছবি মোবাইলে তুলে রাখেন বলে অভিযোগ। ঘটনার কথা কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার পাশাপাশি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ঘটনার পরদিন ভাড়াবাড়ির মালিক তাঁকে ঘর ছাড়ার নোটিস দেন। এরপর তিনি ১০নম্বর ওয়ার্ডে আরএক জায়গায় ভাড়া বাড়িতে থাকা শুরু করেন। 

    নিগৃহীতা যুবতী বলেন, ২২অক্টোবর ওই ঘটনার পর ২৭তারিখ পুরসভায় ডেকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পদুমবসানে একটি নার্সিংহোমে কাজ করতাম। অভিযুক্ত নেতা সেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের উপর চাপ তৈরি করে কাজ থেকে ছাঁটাইয়ের ব্যবস্থা করেন। অভিযোগ নিয়ে থানা কিংবা আদালতে গেলে ধারাবাহিকভাবে প্রাণনাশে হুমকি দেওয়া হয়। যেকোনও সময় প্রাণহানি হতে পারে। প্রতি মুহূর্তে আতঙ্কের মধ্যে কাটাতে হয়। ডাকযোগে থানায় অভিযোগের কপি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু, পুলিস সেই অভিযোগ গ্রহণ করেনি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হই। 

    বিজেপির তমলুক নগর সভাপতি সুকান্ত চৌধুরী বলেন, তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে বলে শুনেছি। পুলিস ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করুক। শাসক দলের একাধিক নেতার বান্ধবীর তালিকা দীর্ঘ। ধোয়া তুলসীপাতা নন। আশা করি, পুলিসি তদন্তে সবটা সামনে আসবে।
  • Link to this news (বর্তমান)