নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বুধবার গভীর রাতে দীঘাগামী ১১৬বি জাতীয় সড়কে মুকুটশিলায় ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম হয়েছেন তিনজন। রাত ১টা ২০মিনিট নাগাদ হলদিয়ার হাতিবেড়িয়া স্টেশন থেকে অটোয় চড়ে ড্রাইভার সহ আটজন দেশপ্রাণ ব্লকের চালতি গ্রামে যাচ্ছিলেন। সেই সময় বেপরোয়া গতিতে থাকা একটি লরি পিছন থেকে যাত্রীবাহী ওই অটোয় ধাক্কা মারে। শিশুদের খেলনা গাড়ির মতো অটো দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। হেঁড়িয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম তিনজনকে তমলুক শহরে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। ঘটনার জেরে এদিন সকাল পর্যন্ত দীঘাগামী জাতীয় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। ঘটনাস্থল থেকে জাতীয় সড়কের দু’দিকে দীর্ঘ গাড়ির লাইন পড়ে যায়। পরে পুলিস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিস জানিয়েছে, পথ দুর্ঘটনায় হুমেরা খাতুন(৩৮), মুনমুন খাতুন(১৮), শেখ মতি(৪৬), আফসানা বিবি(৩০) ও অটো চালক শেখ জাহাঙ্গিরের(৩২) মৃত্যু হয়েছে। অটো চালকের বাড়ি কাঁথি থানার রঘুরামপুরে। বাকি সকলের বাড়ি ওই থানার বসন্তিয়া পঞ্চায়েতের চালতিতে। দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন জুমেরা বিবি, তাঁর ছেলে রমজান খান ও মেয়ে মুস্কান খাতুন। দুর্ঘটনায় নিহত হুমেরা হলেন জুমেরার বোন। জুমেরার বড় মেয়ে মুনমুন। জুমেরা ও হুমেরার মামা হলেন নিহত শেখ মতি। মৃত আফসানা সম্পর্কে মতির পুত্রবধূ। ঘটনার জেরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, জুমেরার স্বামী মতি খান সপরিবারে দিল্লিতে প্রায় ২০বছর ধরে থাকেন। সেখানে লোহালক্করের কারবার করেন। শেখ মতিও একইভাবে দিল্লিতে একই পেশায় সঙ্গে যুক্ত হয়ে সেখানে বসবাস করেন। তাঁরা বাড়িও বানিয়েছেন। বখরি ঈদ ও একটি বিয়ে উপলক্ষ্যে হলদিয়া-আনন্দবিহার টার্মিনাল সুপার ফাস্ট ট্রেন ধরে একসঙ্গে পাঁচজন বাড়ি ফিরছিলেন। অনেক রাতে হলদিয়ার হাতিবেড়িয়া স্টেশনে তাঁরা নামেন। ওই রাতে কাঁথি থেকে অটো নিয়ে তাঁদের রিসিভ করতে গিয়েছিলেন হুমেরা খাতুন ও আফসানা বিবি। ড্রাইভার সহ মোট আটজন অটোয় চড়ে কাঁথির চালতি গ্রামে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলেন।
রাত ১টা ২০মিনিট নাগাদ খেজুরি থানার অধীন কৃষ্ণনগর ও ইড়িঞ্চি ব্রিজের মাঝে মুকুটশিলা এলাকায় অটোর সামনে ও পিছনে দু’টি ভারী যান ছিল। সামনের গাড়ি আচমকা গতি কমিয়ে দেওয়ায় অটো চালক ব্রেক কষে দেন। সেই সময় পিছনে থাকা ১২চাকার লরিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীভর্তি অটোয় ধাক্কা মারে। লরির ধাক্কায় দুমড়ে মুচড়ে যায় অটো। তারমধ্যে আটকে যান যাত্রীরা। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হেঁড়িয়া ফাঁড়ি ছাড়াও খেজুরি, ভূপতিনগর, মারিশদা ও কাঁথি থানা থেকে বাহিনী যায়। ঘটনাস্থলে যান কাঁথির মহকুমা পুলিস অফিসার দিবাকর দাস। দুমড়ে যাওয়া অটো থেকে নিহত ও আহতদের বের করা হয়। দুর্ঘটনার পর লরি ফেলে চম্পট দেয় ড্রাইভার। ঘাতক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ধরে মালিককে ফোন করেন ট্রাফিক বিভাগের অফিসাররা। ঘাতক লরি চালকের বাড়ি মহিষাদল থানার কাপাসএড়িয়ায়। অবিলম্বে তাকে নিয়ে পুলিসের সামনে হাজির হতে লরি মালিককে নির্দেশ দিয়েছে পুলিস।
মৃতদের আত্মীয় শেখ তাবু বলেন, আমার ভাই শেখ মতি ও ভাগ্নি জামাই মতি খান সপরিবারে দিল্লিতে থাকে। ঈদ উপলক্ষ্যে দুই পরিবারের পাঁচজন বাড়ি ফিরছিল। তাছাড়া, জুমেরার পেটে টিউমার হয়েছে। এখানে অস্ত্রোপচার করার কথা ছিল। তাই সকলে বাড়ি রওনা দিয়েছিল।
অতিরিক্ত পুলিস সুপার(ট্রাফিক) শ্যামলকুমার মণ্ডল বলেন, দুর্ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘাতক গাড়ি ছেড়ে চালক পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্ট চলছে।