• ‘রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী’, বঙ্গ সফরে মোদীর ভাষণ নিয়ে তীব্র আক্রমণ মমতার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩০ মে ২০২৫
  • পহেলগামে নৃশংস জঙ্গি হামলার পর প্রথম বঙ্গ সফরে এসে বিতর্কিত ভাষণ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার এই সফরে এসে ‘অপারেশন সিঁদুর’-কে রাজনৈতিক হাতিয়ার করা এবং রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে দুর্নীতি ও হিংসা নিয়ে আক্রমণ করতেই গর্জে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে সমঝে দিয়ে বলেন, ‘রাজ্যে এসে আক্রমণ করার এটা সময় নয়। সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল দেশে দেশে প্রতিবাদে সোচ্চার। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মোদী সরকারকে সমর্থন জানাচ্ছে বিরোধীরা। আমাদের প্রতিনিধি অভিষেকও সেই সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলে রয়েছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর এটা শোভা পায় না।’

    প্রসঙ্গত পহেলগামে জঙ্গি হামলার কড়া নিন্দা করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার প্রত্যাঘাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়েও বরাবরই কেন্দ্র সরকার ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর পাশে থেকেছে তৃণমূল ও রাজ্য সরকার। এমনকি কেন্দ্রের সর্বদলীয় প্রতিনিধিদলে পাকিস্তানের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক প্রচারেও অংশগ্রহণ করেছে তৃণমূল সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। সেই সাত প্রতিনিধিদল এখনও দেশে ফেরেনি। এমতাবস্থায় মোদী বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করতেই তৃণমূল শিবিরে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নবান্নে মমতার সাংবাদিক বৈঠকেও সেই প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যায়।

    এদিকে সামনের মাসেই রাজ্যের কালীগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচন। আবার বছর ঘুরতেই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন। এরকম একটি বিশেষ মুহূর্তে রাজ্যের শাসকদলকে মোদীর এই আক্রমণ যে আসন্ন ভোটের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে, তা আঁচ করতে বিন্দুমাত্র ভুল হয়নি দীর্ঘদিনের পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি মোদীর এই রাজনৈতিক মন্তব্যগুলিকে লুফে নিয়ে পাল্টা তুলোধোনা করেছেন বিজেপি ও কেন্দ্রের মোদী সরকারকে। এমনকি মমতা আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রীর সভায় জমায়েতে মানুষের ভিড় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। রাজ্যের উপনির্বাচনের মুখে মোদীকে মিথ্যের সওদাগর বলে দাগিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অসম থেকে লোক এনে মোদীর সভা ভরানো হচ্ছে। ক্ষমতা থাকলে কাল নির্বাচনে আসুন।’

    এদিন প্রধামন্ত্রী আলিপুরদুয়ারের জনসভায় ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্য তুলে ধরতেই তীব্র আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পহেলগামে জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাত হিসেবে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘নির্বাচনী রং লাগিয়ে রাজনীতির হোলি খেলছেন। “অপারেশন সিঁদুর” নাম দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু মোদী এখন সিঁদুর বেচতে এসেছেন। প্রথমে বলতেন চা ওয়ালা, পরে হলেন পাহারাদার। কিন্তু মা-বোনেদের সিঁদুর ওভাবে বেচা যায় না। প্রত্যেক মহিলা তাঁর স্বামীর থেকে সিঁদুর নেন। আপনি সবার স্বামী নন। মোদী কেন নিজের স্ত্রীকে সিঁদুর পরাচ্ছেন না?’

    বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বাংলার পাঁচ সংকটের কথা উল্লেখ করে রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেন। মোদীর সেই বক্তব্যে উঠে আসে রাজ্যের দুর্নীতি ও হিংসার প্রসঙ্গ। মালদহ ও মুর্শিদাবাদে হিংসা প্রসঙ্গে মোদী রাজ্যকে আক্রমণ করতেই বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করেছেন মমতা। মালদা ও মুর্শিদাবাদে হিংসার ঘটনা কার্যত বিজেপির চক্রান্ত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এবিষয়ে তাঁর কাছে উপযুক্ত প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিজেপি শাসিত রাজ্যে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি। বাংলার সরকার হচ্ছে মানবিক সরকার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তৃণমূল সরকার।’

    এদিন সাংবাদিক বৈঠকে নবান্নে মমতা বলেন, ‘মুর্শিদাবাদ-মালদহের ঘটনা বিজেপিই ঘটিয়েছে। দাঙ্গা লাগানোর ওস্তাদ বিজেপি। তার তথ্যপ্রমাণ রয়েছে আমাদের কাছে। চাইলে দিয়ে দেব। বাংলার সামাজিক অবস্থা সবথেকে ভালো যা বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। সেই জন্য গর্বিত।’

    উল্লেখ্য, কয়েকমাস আগে ওয়াকফ আইনের বিরোধিতা করে আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের কিছু অংশ। সেই আঁচ খানিকটা পড়ে পাশের জেলা মালদহেও। পুলিশ ও বিএএসএফ যৌথভাবে সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে আধাসেনাও নামানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সরকারি সাহায্য দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি সরকারি বা জনসভার মঞ্চ থেকে তিনি একাধিকবার জানিয়েছেন, তিনি হিংসার বিরুদ্ধে। দাঙ্গাতে সবার ক্ষতি হয়। কেউ হিংসা ছড়ালে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)