দেওয়া হয়নি বলি, পরদিন গ্রামে ঘটে মারত্মক ঘটনা! বাঁকুড়ার পরীদেবীর মাহাত্ম্য শুনলে শিউরে উঠবেন ...
আজকাল | ৩০ মে ২০২৫
শিল্পী চার: বাঁকুড়া জেলার খাগ বৈকুণ্ঠপুর গ্রামের পাশের ঘন জঙ্গলে রয়েছেন এক রহস্যময় বনদেবী-'দেহলী পরী'। 'পরী' শব্দটি থাকলেও, কোনো মূর্তি নেই। দেবী পূজিতা হন হাতি ও ঘোড়ার প্রতিকৃতি রূপে। এই পরী কোনও রূপকথার চরিত্র নয়। তিনি এই গ্রামের মানুষের কাছে এক জীবন্ত ভক্তি ও ভয়ের দেবী।
প্রায় দেড়শ বছর আগের কথা। তখন গ্রামবাসীরা থাকতেন ঘরডিহি নামে এক গভীর জঙ্গলের ভিতরের গ্রামে। সেখানেই সীতাপত্র গাছের তলায় থাকতেন দেহলী পরী। কথিত আছে, এক রাতে স্বপ্নে দেবী জানান, শিশুর কান্না, ঢেঁকিতে ধান ভানার শব্দ, কুলোর আওয়াজ তিনি সহ্য করতে পারছেন না। তাই তিনি পশ্চিম দিকে জঙ্গলের পাশে স্থান পরিবর্তন করছেন এবং তিন দিনের মধ্যে সেখানেই তাঁকে খুঁজে পুজো দিয়ে স্থাপন করতে হবে। না হলে ভয়ঙ্কর ফল ভোগ করতে হবে সকলকে।
স্বপ্নের নির্দেশ মতো, পরদিনই ঢাক-ঢোল নিয়ে দেবীকে খুঁজে পাওয়া যায়। সেই থেকে ওই স্থানেই বিরাজ করছেন দেহলী পরী। গ্রামের স্থান পরিবর্তন হলেও, দেবীর স্থান বদল হয়নি। গ্রামের লোকজন এখনও বছরে দু’টি নির্দিষ্ট দিনে মকর সংক্রান্তির পরের দিন এবং দশহরার দিন প্রায় চার কিলোমিটার জঙ্গলের ভিতর হেঁটে যান পূজা দিতে। দেবীর পুজো আজও অক্ষরে অক্ষরে পালন হয়।
এই দেবীর পুজোতে বলি একটি বাধ্যতামূলক রীতি। একটি পাঁঠা ও একটি মোরগ বলি দিতে হয়। একবার গ্রামের কিছু যুবক বলির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে পাঁঠা বলি বন্ধ করে দেন। কথিত আছে, সেই রাতেই পূজারী স্বপ্নে দেখেন, দেবী কূপিতা। তিনি জানান, এর ফল সবাইকে ভোগ করতে হবে। লোকমুখে শোনা যায়, পরদিন গ্রামে ঘটে যায় একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় এক গৃহবধূর। তারপর থেকে কেউ আর সাহস করেনি নিয়ম ভাঙার।
দেহলী পরী শুধুমাত্র এক বনদেবীর পরিচয় নয়, ওই অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস, সংস্কার এবং প্রাচীন লোকবিশ্বাসের এক জীবন্ত সাক্ষ্য। আজও তাঁর পূজায় ভক্তি যেমন আছে, তেমনই রয়েছে এক অলৌকিক ভয়।