• রেলগেটে গাড়ির লম্বা লাইন, বেলদায় টোটোতে মৃত সন্তান প্রসব প্রসূতির
    এই সময় | ৩১ মে ২০২৫
  • বেলদার রেলগেটে আটকে পড়ে টোটোতেই প্রসব করল প্রসূতি। যদিও মৃত সন্তানের জন্ম দেয় সে। শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদায় এই ঘটনা ঘটে। যদিও জানা গিয়েছে, ওই প্রসূতি নাবালিকা। ১৫ বছর বয়স। তবে স্থানীয় আশাকর্মী জানান, প্রসূতির বয়সটা যেমন বিষয়, একই ভাবে বেলদার এই রেলগেটের জন্য মানুষকে যে ভুগতে হয়, সেটাও এড়িয়ে যাওয়া যায় না।

    গত ২৭ এপ্রিল, বেলদার এই লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই টোটোতে ছেলের কাঁধে মাথা রেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন বেলদার বাসিন্দা মণীন্দ্রনাথ ষড়ঙ্গী (৭৫)। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার ৩০ মে সকালে সেই লেভেল ক্রসিংয়েই আটকে গিয়ে টোটোর মধ্যেই মৃত সন্তান প্রসব করলেন নারায়ণগড়ের এক অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা। টোটোতে তাঁর পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও ছিলেন ওই এলাকার আশাকর্মীও।

    নাবালিকার পরিবার সূত্রে খবর, বছর খানেক আগে পালিয়ে বিয়ে করেছিল সে। বিয়ের পর পরই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। কয়েক মাস ধরে বাপের বাড়িতেই থাকছিল। শুক্রবার সকালে নাবালিকার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় বলে জানান পরিবারের লোকজন।

    এর পরই স্থানীয় আশাকর্মী কৃষ্ণা পড়িয়াকে খবর দেওয়া হয়। তিনিই টোটো ডেকে বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সঙ্গে ওই নাবালিকার স্বামীও ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে গর্ভস্থ সন্তানের সাড়াশব্দ না পেয়ে USG করাতে পাঠান ডাক্তাররা। সকাল ৯টা নাগাদ USG করতে যাওয়ার পথেই এই ঘটনা ঘটে।

    কৃষ্ণা পড়িয়া জানান, মেয়েটি তাঁর এলাকার নয়। নারায়ণগড় থানারই অন্য একটি এলাকার। কিছু দিন ধরে এখানে বাপের বাড়িতে থাকছিল। সকালে প্রসব যন্ত্রণার কারণে তাঁকে ফোন করা হয় পরিবারের তরফে। এর পরই তিনি আসেন। টোটোতে বাইরে USG করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় রেলগেট পড়ে যায়। আপ ও ডাউন দুই লাইনেই একাধিক ট্রেন যাওয়ার ফলে প্রায় বেশ কিছুটা সময় আটকে যান। অনেক চেষ্টা করেও টোটো ঘুরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারেননি। টোটোতেই মৃত সন্তান প্রসব করেন নাবালিকা।

    বেলদার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মণ্ডলের কথায়, ‘আমাদের চিকিৎসক দেখার পরই অনুমান করেছিলেন, গর্ভেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। তাই USG করিয়ে আনার কথা বলেন। বেলদা হাসপাতালে এখনও ইউএসজি চালু হয়নি। পথেই ওই প্রসূতি মৃত সন্তান প্রসব করে। এটা ঠিক, রেলগেট না পড়লে হয়তো হাসপাতালেই প্রসব করত ওই নাবালিকা। কিন্তু, সুস্থ সন্তান প্রসব করত না। কারণ, মৃত শিশুটিকে আমরা প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করে দেখেছি, অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে গর্ভেই তার মৃত্যু হয়েছে।’

    এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, বাল্যবিবাহ ঠেকাতে বা নাবালিকাদের অন্তঃসত্ত্বা হওয়া রুখতে প্রশাসনের তরফে এত প্রচার, সচেতনতামূলক কর্মসূচি সত্ত্বেও কী ভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে? ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে প্রতিনিয়ত প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু, এই ধরনের ঘটনাই প্রমাণ করে এখনও মানুষ সচেতন হননি।

    জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছিল অ্যাম্বুল্যান্স করে পাঠানো। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। উপ মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক (৩) পৌঁছেছেন। হাসপাতালের সুপার এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক-নার্সদের শোকজ় করেছি। সেই সঙ্গে শালবনি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে একটি অতিরিক্ত USG মেশিন শনিবারই আমরা বেলদাতে পাঠাচ্ছি।’

    একই সঙ্গে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, নাবালিকাদের বিয়ে বা গর্ভধারণ নিয়ে জেলাশাসকের নির্দেশে জেলা জুড়ে নানা কর্মসূচি ও সচেতনতা প্রচার অভিযান চলছে। ২০২৩-২০২৪-এ জেলায় নাবালিকা প্রসূতির সংখ্যা ছিল ৬৯৭। চলতি বছরে তা কমে হয়েছে ৬৪৮।

  • Link to this news (এই সময়)