• প্রভাবিত হয় বাংলাদেশেরও বিতর্কিত কয়েকজনের বক্তব্যে, নিষিদ্ধ বক্তার ভিডিও দেখত হুমায়ুন
    বর্তমান | ৩১ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: সারারাত জেগে নিষিদ্ধ এক বক্তার ভিডিও দেখত মেমারির হুমায়ুন কবীর। তার বক্তব্যে প্রভাবিত হয়েই হুমায়ুনের মাথা ঘুরে যায়। এছাড়া সে বাংলাদেশেরও কয়েকজন বিতর্কিত বক্তার বক্তব্য শুনত। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হুমায়ুনের ধর্মের প্রতি টান বহু দিনের। দিল্লিতে কর্মরত থাকার সময়েও সে ধর্মীয় আচার পালন করত। তার ধারণা ছিল, গরিবদের দান করলে মহান হওয়া যায়। সেই বিশ্বাসে সে বেতনের অনেকটা টাকাই বিলি করে দিত। সে সম্পত্তি গরিবদের বিলিয়ে দেওয়ার জন্য বাবা ও মাকে চাপ দিত। তাতে তাঁরা রাজি ছিলেন না। সেই কারণে তাঁদের প্রতি তার আক্রোশ তৈরি হয়। এছাড়া বিভিন্ন কারণে তার সঙ্গে বাবা, মায়ের প্রায়ই মতানৈক্য তৈরি হতো। সেই কারণেই সে বাবা ও মাকে খুনের ছক কষে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিস এমনটাই জানতে পেরেছে। 

    স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক ছিল না। ছুটিতে বাড়িতে থাকার সময়েও সে ল্যাপটপ ও বইয়ে মুখ গুঁজে থাকত। স্ত্রীর সঙ্গে বিশেষ কথা বলত না। কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে সে খেপে উঠত। সেই কারণে বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পুলিস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, খুনের রাতে দীর্ঘক্ষণ সে গুগল ঘাঁটাঘাঁটি করেছিল। কোন রাস্তায় সহজে বাংলাদেশে পৌঁছনো যাবে, সেটা সে ঠিক করে। ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফুটেজ সিসি ক্যামেরায় পুলিস পেয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, খুন করার পর সে স্বাভাবিকভাবেই হেঁটে যাচ্ছে। তখনও তার কোমরে ছুরি বাঁধা ছিল। 

    প্রাথমিক তদন্তে পুলিস জানতে পেরেছে, তার মানসিক সমস্যা থাকলেও ধরা পড়ার ভয় ছিল। সেই কারণেই সে নিখুঁত কায়দায় বাবা ও মাকে খুন করে। প্রমাণ লোপাটের জন্য ঘরের সিসি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিয়েছিল। নিজের মোবাইল বন্ধ করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ার সমস্ত অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দিয়েছিল। 

    হুমায়ুনের এক আত্মীয় বলেন, বনগাঁয় ওদের পরিচিত কেউ নেই। সেখানে সে কোনওদিন যায়নি। চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে তার মধ্যে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা যায়। চাকরি ছেড়ে ঘরে চলে আসে। খুব বেশি বাড়ির বাইরে বেরত না। বাবা ও মায়ের সঙ্গেও খুব বেশি কথা বলত না। এমনকী, পরিবারের লোকজন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে চাইলেও যেত না। ওষুধ খেত না। কয়েকজন তাকে মেন্টাল হাসপাতালে রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু, হুমায়ুন যেতে চায়নি। তাকে হাসপাতালে পাঠানো গেলে হয়তো বাবা ও মায়ের এই পরিণতি হতো না। এমনটাই বলছেন প্রতিবেশীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)