নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: কথা দিয়ে কথা রাখলেন সাংসদ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র মন্দিরময় গ্রাম পাথরা পরিদর্শনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেন সাংসদ জুন মালিয়া। একইসঙ্গে পাথরা এলাকায় থাকা ইকো পার্ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন। আর এতেই খুশি পাথরা এলাকার মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে পাথরা এলাকায় সাংসদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীণ ইয়াসিন পাঠান ও জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, পাথরা এলাকায় জমি অধিগ্রহণ হলেও টাকা পাননি চাষিরা। এছাড়া পাথরা এলাকায় সৌন্দর্যায়নের কাজ না হওয়ায় পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। এই এলাকায় বিভিন্ন হোম স্টে তৈরি হলেও পর্যটকের অভাবে বন্ধ হতে বসেছে। এই সমস্ত বিষয় সাংসদ পর্যটন বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে তুলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিন সাংসদ বলেন, প্রথমবার পাথরা এলাকায় গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হল। এত সুন্দর জায়গা, শুটিং করার জন্য একদমই পারফেক্ট। এই এলাকায় একটি ইকো পার্কও আছে। খুব তাড়াতাড়ি ইকো পার্কটি ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া এলাকার জমিদাতাদের সমস্যার কথা শুনেছি। সেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব।
পাথরা এলাকার বাসিন্দা স্বপন মণ্ডল বলেন, ভোটের সময় প্রচারে এসে সাংসদ কথা দিয়েছিলেন। উনি সেই কথামতো এই এলাকায় এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গেও কথাবার্তা বলেন। এই এলাকার পর্যটনের বিকাশ হলে অর্থনীতিও বদলে যাবে।
প্রসঙ্গত, মেদিনীপুর শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই কংসাবতী নদীর পাশেই রয়েছে পাথরা গ্রাম। এই গ্রামে বহু মানুষের বসবাস। এই গ্রামে থাকা ৩৪টি জীর্ণ মন্দির-সৌধ রক্ষা করে চলেছেন গ্রামবাসীরা। সেই ঐতিহাসিক মন্দির নিয়ে গবেষণা করেছেন এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন পাঠান। মন্দির রক্ষা করতে তাঁকে নানা সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। জানা গিয়েছে, পরবর্তী সময়ে মন্দির রক্ষা করতে পাথরা আর্কিওলজিক্যাল প্রিজার্ভেশন কমিটি তৈরি হয়। সেসময় মন্দির সংস্কারের জন্য লাগাতার চেষ্টা চালানোর পর, ২০০৩ সাল নাগাদ কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দ্রুত জমি অধিগ্রহণও করা হয়। কিন্তু, এত বছর কেটে গেলেও চাষিরা জমির দাম পাননি।
জানা গিয়েছে, গ্রামের ৩৪টি মন্দিরের মধ্যে মাত্র ১৯টি মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। বাকি মন্দিরগুলি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। এমনকী নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুব দুর্বল। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ইয়াসিন সাহেব মুসলিম হয়েও হিন্দু মন্দিরের জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁর লড়াইকে এলাকার মানুষ কুর্নিশ জানায়। বহু সম্মান পেয়েছেন ইয়াসিন সাহেব। কিন্তু, তাঁর বেশকিছু দাবি এখনও পূরণ হয়নি। এছাড়া পাথরা এলাকার মন্দির চত্বর সাজিয়ে তোলার জন্য কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এবিষয়ে উদাসীন। স্থানীয় ইকো পার্কটি বন্যার সময় জলে ডুবে গিয়েছিল।
ইয়াসিন সাহেব বলেন, সাংসদ পাশে দাঁড়ানোয় ভরসা পেলাম। প্রায় এক বছর পর পাথরা মন্দিরে গেলাম। সাংসদের আন্তরিকতা আমাদের সকলকেই মুগ্ধ করেছে। উনি সকলকে ভরসা দিয়েছেন। আশা করছি এবার সমস্যার সমাধান হবে।