• সরকারি পাট্টা থাকলেও প্রতি বছর উচ্ছেদের হুমকি রেলের, উদ্বেগে মগরার ৪০০ পরিবার
    বর্তমান | ৩১ মে ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, চুঁচুড়া: বছর বছর বসতি উজাড় হয়ে যাওয়ার ভয়েই দিন কাটে মগরার কোলা গ্রামের বাসিন্দাদের। সরকারি পাট্টা মিলেছে, হয়েছে সরকারি প্রকল্পের বাড়ি। কারও কারও নামে বরাদ্দ হয়েছে টাকাও। কিন্তু সেসবে সুখ নেই প্রায় চারশো পরিবারের। কারণ, উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি থেমে নেই। চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের মগরা স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের প্রায় প্রতি বছর হুমকির মুখে পড়তে হয়। ২০২৫ সালেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সদ্য নোটিস ঝুলিয়েছে রেলদপ্তর। আজ, ৩১মে তারিখের মধ্যে বসতি খালি করতে হবে। অভিযোগ, কোলার বাসিন্দারা রেলের জমিতে রয়েছেন।

    স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই জমি ভারতীয় রেলের নয়, রাজ্য সরকারের। তার নথি আছে। কিন্তু মত, পাল্টা মতের দাপটে বসতি নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না। মিলছে না নিশ্চয়তা। প্রশাসন থেকে পঞ্চায়েত— কেউ কোলা গ্রামের চারশো পরিবারকে বলছে না, উচ্ছেদের বাৎসরিক ভয় আসবে না। তাই রাতে ঘুম উড়েছে শীলা মাঝির। মধ্যবয়সি ওই বাসিন্দার নামে বাংলার বাড়ি বরাদ্দ হয়েছে। শীলাদেবী বলেন, বাড়ি কি আর হবে? শনিবার যে উঠে যেতে বলেছে রেল! বছর বছর আর কত হুমকি শোনা যায়। নিজেদের কেমন যেন ভিখিরি লাগে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দা টিনা মাঝি বলেন, এবার একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার। প্রতি বছরই খেদিয়ে দেওয়ার হুমকি আর মানতে পারছি না। ইতিমধ্যেই রেলের নোটিস নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন মগরা-১ নম্বর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান রঘুনাথ ভৌমিক ও মগরা ২ নম্বর পঞ্চায়েতের প্রধান জয়শ্রী পাল। তাঁরা বলেন, ওই জমি রাজ্য সরকারের। অন্যায়ভাবে রেল তাতে হস্তক্ষেপ করছে। রঘুনাথ বলেন, ২০২২ সালে একবার রেল উচ্ছেদের নোটিস দিয়েছিল। আমরা তখন চ্যালেঞ্জ করি। তারপর আর পদক্ষেপ করেনি। ভেবেছিলাম, সমস্যা মিটে গিয়েছে। কিন্তু আবার নোটিস দিয়েছে। মগরা স্টেশন কর্তৃপক্ষ এনিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি। তবে কর্তাদের একাংশের দাবি, সমস্যা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষই মেটাতে পারবে।

    সমস্যা কোথায়? মগরা স্টেশন সংলগ্ন কোলা এলাকাটি স্বাধীনতার আগে বেঙ্গল প্রভিনশিয়াল রেলওয়ে নামে একটি বেসরকারি কোম্পানির ছিল। স্বাধীনতার পর তা রাজ্যের অধিকারে আসে। প্রশাসনের দাবি, আইনগতভাবে জমি নিয়ে ২০১৫-’১৬ সালে পাট্টা বিলি হয়। কিন্তু বছর বছর রেল অতীত রেলওয়ের জমি হিসেবে কোলার জমি তাদের বলে দাবি করে এবং উচ্ছেদ করতে তৎপর হয়ে ওঠে। এই টানাপোড়েনেই নিজভূমে পরবাসী হয়ে যন্ত্রণা ভোগ করছে চারশো পরিবার।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)