দলের নির্দেশে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন অনুব্রত, এফআইআর পুলিশের
দৈনিক স্টেটসম্যান | ৩১ মে ২০২৫
বোলপুরের আইসি লিটন হালদারকে ফোন করে গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছিল বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল এই ঘটনায় কড়া অবস্থান নিতেই ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। পুলিশকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করে একটি চিঠি প্রকাশ করেছেন অনুব্রত। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘পুলিশকে অপমান করার কথা ভাবতে পারি না। আমি দুঃখিত।’ তবে ক্ষমা চাওয়ার পরেও কয়েকটি প্রশ্ন সামনে রেখেছেন অনুব্রত। বোলপুরের আইসির সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অডিও কীভাবে ফাঁস করা হল সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। লিটনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। তৃণমূল নেতার নিরাপত্তার জন্য জেলা পুলিশের চারজন কর্মী মোতায়েন থাকে। সেই চারজনকে দায়িত্ব থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ হাউস স্টাফকেও অনুব্রতের নিরাপত্তার কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে একটি গাড়িও।
শুক্রবার একটি অডিও ক্লিপ (যার সত্যতা যাচাই করেনি দৈনিক স্টেটসম্যান) ভাইরাল হয়। সেই অডিওতে শোনা যায়, এক ব্যক্তি কথা বলার সময় অন্য এক ব্যক্তিকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন অনুব্রত মণ্ডল এবং অন্যজন বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদার। ফোনে লিটনকে কদর্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শোনা যাচ্ছে অনুব্রতকে। এই অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রথমে অনুব্রতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। কিন্তু এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতেই শুক্রবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ অনুব্রতকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলে তৃণমূল কংগ্রেস। এর জন্য চার ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। তৃণমূলের এই কড়া অবস্থানের পরই চিঠি লিখে ক্ষমা চেয়ে নেন অনুব্রত।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে অনুব্রত চিঠিতে লিখেছেন, ‘আমি নানারকম ওষুধ খাই। দিদির পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগ করলে মাথা গরম হয়ে যায়। আমি সত্যিই দুঃখিত।’ তবে দুঃখপ্রকাশ করেও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, তিনটে মহকুমা— বোলপুর, সিউড়ি, রামপুরহাটে মানুষের বিশাল মহামিছিল দেখে কারা ভয় পেল? বোলপুরের আইসির সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অডিও কীভাবে বিজেপির কাছে পৌঁছাল? এর মধ্যে কোনও চক্রান্ত রয়েছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনুব্রত। যদিও সব শেষে পুলিশকে বন্ধু বলে সম্বোধন করে তিনি লিখেছেন, ‘তবুও আমি বলছি কোনও পুলিশ বন্ধু আমাকে ভুল বুঝলে আমি দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।’ এ বিষয়ে অনুব্রত সংবাদমাধ্যমের সামনেও মুখ খুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল কর্মীর নিরীহ ছেলেকে মারধর করেছে পুলিশ। সেই কারণে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ওই পুলিশকর্মীও তাঁকে খারাপ কথা বলেছেন বলে অভিযোগ অনুব্রতর।
জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, অনুব্রতের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২২৪ (সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও কর্তব্যরত কর্মীকে হুমকি), ১৩২ (সরকারি কর্মচারীকে হেনস্থা), ৭৫ (শ্লীলতাহানি ও হেনস্থা) এবং ৩৫১ (হুমকি) ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব পথে চলবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তাঁকে (অনুব্রত মণ্ডলকে) দলের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। যখন বিজেপির নেতারা একজন মহিলা সেনা-অফিসারকে ‘পাকিস্তানি’ বলেন, তখন কেউ প্রতিবাদ করে না। এরপর পাঁচের পৃষ্ঠায়