সুপ্রকাশ চক্রবর্তী, হাওড়া
অ্যামাজনের জায়ান্ট লিলি হোক কিংবা দ্য গ্রেট বেনিয়ান ট্রি। এই ধরনের দুষ্প্রাপ্য ও দুর্মূল্য গাছের চারা আপনার বাড়ির টবে কিংবা বাগানে বসাতে চান? তার জন্য আপনাকে এখানে ওখানে হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে না।
এ বার সেই সুযোগ করে দিচ্ছে হাওড়ার শিবপুরের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান বোটানিক গার্ডেন। সেই লক্ষ্যে শুক্রবার বি গার্ডেনে চালু হলো ‘উদ্ভিদ বিপণন কেন্দ্র’ (প্ল্যান্ট সেল কাউন্টার)।
বোটানিক গার্ডেনের যুগ্ম অধিকর্তা দেবেন্দর সিং জানিয়েছেন, শতাব্দীপ্রাচীন বি গার্ডেনে অনেক পুরোনো গাছ-গাছালি রয়েছে। কোনও কোনও গাছ থেকে গড়ে দু’–তিনহাজার চারা তৈরি হয়। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক চারাগাছ বসানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই বি গার্ডেনে। তাই বাধ্য হয়েই অনেক চারা বন দপ্তরের হাতে তুলে দিতে হয়।
এই সব গাছের চারা যাতে সাধারণ মানুষ নিজেদের বাগানে কিংবা বাড়িতে বসাতে পারেন, সেই সুযোগ করে দিতেই আলাদা কাউন্টার খোলা হয়েছে। যে সব গাছ সচরাচর নার্সারি থেকে কিনতে পাওয়া যায় না, এই ধরনের মোট ৭২টি প্রজাতির গাছের চারা বি গার্ডেনের কাউন্টারে রাখা হয়েছে।
আছে বিভিন্ন ধরনের বনসাই এবং ভেষজ উদ্ভিদ। দামটাও থাকছে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। গাছের দাম রাখা হয়েছে গড়ে ২০–১০০ টাকা পর্যন্ত৷ যেমন, এখানে দুষ্প্রাপ্য শিশু জীবন গাছের চারা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫০ টাকায়।
বেহাদার একেকটা চারার দাম ৬০ টাকা। দুষ্প্রাপ্য গাছের পাশাপাশি শাল, সেগুন, তেজপাতা, তেঁতুল, কলা গাছের চারাও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে৷ কিছু মূল্যবান গাছ, যেগুলি বাইরে কিনতে গেলে ৫০০–১০০০ টাকা পড়ে, সেটাই এখানে পাওয়া যাচ্ছে ২০–১০০ টাকায়।
ভেনেজুয়েলার পাখি ফুলের চারা বাজারে বিক্রি হয় হাজার টাকায়। সেটা এখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০০ টাকায়। গাছের চারাগুলিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে এক রকমের ফাঁপা বাঁশ দিয়ে বিশেষ ডিজাইনের টব বনানো হয়েছে।
তার মধ্যে মাটি ভরে বাঁশের টব-সমেত গাছের চারা বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিটা টবের গায়ে গাছের স্থানীয় নাম, বিজ্ঞানসম্মত নাম ও দাম লেখা রয়েছে। নগদ ছাড়াও অনলাইনে কিংবা কিউআর কোড দিয়ে টাকা মেটানো যাবে৷
দেবেন্দর বলেন, ‘চাহিদার কথা বিবেচনা করে আপাতত কিছু পরিচিত গাছ কাউন্টারে বেশি করে রাখা হয়েছে। পরে গাছের সংখা আরও বাড়ানো হবে। যদি জায়ান্ট লিলি, বিশাল বটবৃক্ষের মতো অন্য কোনও দুষ্পাপ্য গাছ কেউ কিনতে চান, তারও ব্যবস্থা করা হবে। প্রথম দিনই প্রচুর গাছ বিক্রি হয়েছে।’
প্ল্যান্ট সেল কাউন্টার ছাড়াও এ দিন বি গার্ডেনে গড়ে ওঠা চায়ের বাগান এবং কয়েকটি নার্সারির উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব নমিতা প্রসাদ৷ তিনি নিজে একটি কারি পাতার গাছ কিনে তার শুভ সূচনা করেন।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার নির্দেশক আসিহো এ মাও৷ তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগের ফলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে যে সব দুষ্প্রাপ্য গাছ আছে, তার আরও বিস্তার ঘটবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।’