• বাড়ছে করোনা, পুরোনো টিকার পরিমার্জন চান ডাক্তাররা
    এই সময় | ৩১ মে ২০২৫
  • বাজারে ঠিকঠাক পাওয়া না গেলেও কেউ যদি মনে করেন, করোনার টিকা নিয়ে নেবেন এই আবহে, তা হলেও কোনও লাভ নেই। কারণ, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২১–এ করোনার পুরোনো ভ্যারিয়েন্ট থেকে বানানো টিকা করোনার নতুন উপপ্রজাতিকে ঠেকাতে খুব একটা পটু নয়।

    করোনার সাম্প্রতিকতম সাব–ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ী, ২০২২-এর তৈরি টিকার পরিমার্জন দরকার। যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা জানাচ্ছেন, গণ-টিকাকরণের প্রয়োজন এখন আদৌ নেই। তবে প্রয়োজন পড়লে, সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা তৈরি করে নেওয়ার মতো পরিকাঠামো দেশে আছে।

    এ দিকে সংখ্যায় অল্প হলেও রোজই করোনা পজ়িটিভ চিহ্নিত হচ্ছেন শহরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোনও না কোনও রোগী। কলকাতার বাইরে দুই ২৪ পরগনা এবং মালদা ও পুরুলিয়ার পরে শুক্রবারও কলকাতায় একাধিক করোনা রোগীর খোঁজ মিলেছে নতুন করে।

    এর মধ্যে ঢাকুরিয়া মণিপাল হাসপাতালে বছর কুড়ির এক তরুণ এবং উডল্যান্ডস হাসপাতালে এক বছর তিপ্পান্নর মহিলার শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। উডল্যান্ডস-সহ শহরের আরও অন্তত পাঁচটি হাসপাতালে করোনা রোগী চিকিৎসাধীন গত কয়েক দিন ধরে।

    এমনই সন্ধিক্ষণে এ দিন করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। বৈঠকে অবশ্য করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।

    যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদের মতো চিকিৎসকরাও মনে করছেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এই মুহূর্তে টিকার কোনও প্রয়োজন নেই নতুন করে।

    কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর উপদেষ্টা গবেষক তথা করোনা মোকাবিলার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী সমীরণ পণ্ডা বলেন, ‘নতুন পরিমার্জিত ভ্যাকসিন তৈরির ব্যাপারে দেশের পরিকাঠামো যথেষ্ট মজবুত।

    শুধু দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি নিষ্ক্রিয় ভাইরাস (কোভ্যাক্সিন) কিংবা অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর (কোভিশিল্ড) ভ্যাকসিনই নয়, বিদেশী প্রযুক্তিতে তৈরি একাধিক এম-আরএনএ ভ্যাকসিনও রয়েছে এখন ভারতে। গণ–টিকাকরণের প্রয়োজন যখন পড়বে, তখন সপ্তাহ খানেকের মধ্যে কয়েক কোটি ইউনিট টিকা তৈরি করে নেওয়ার মতো ব্যবস্থা রয়েছে দেশের।’

    কিন্তু যে টিকাগুলি মজুত রয়েছে, সেগুলি কি আদৌ এখন ব্যবহারযোগ্য রয়েছে? সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সায়ন চক্রবর্তী মনে করেন, ‘না, খুব লাভ নেই। কোভিডের টিকা তৈরি হয়েছিল ভাইরাসের প্রথম পর্বের প্রজাতিগুলি দিয়ে। পরে ওমিক্রনের জন্য টিকাও তৈরি হয়। কিন্তু তার পরে গত তিন বছরে নিত্যনতুন প্রজাতি ও উপপ্রজাতি এসেছে করোনার। সেগুলির উপর পুরোনো টিকা খুব একটা কার্যকর নয়। তাই ওগুলো নিয়ে লাভ নেই। দরকার করোনা টিকার এমন পরিমার্জন যেগুলি নতুন প্রজাতিগুলির উপর কার্যকর হয়।’

    কেন, তার কারণ ব্যাখ্যা করছেন ভাইরোলজি বিশেষজ্ঞ সৌরীশ ঘোষ। তিনি জানাচ্ছেন, ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তনের জন্যই পুরোনো টিকাগুলি প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে।

    সৌরীশের কথায়, ‘বেশির ভাগ টিকা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে লক্ষ্য করে তৈরি। কিন্তু ওমিক্রন ও তার সাব–ভ্যারিয়েন্টের (যেমন এক্সবিবি, বিএ.২.৮৬, জেএন.১, কেপি.২ এবং বর্তমানে এনবি.১.৮.১ ও এলএফ.৭) স্পাইক প্রোটিনে একাধিক মিউটেশন হয়েছে। ফলে পুরোনো টিকার দৌলতে তৈরি অ্যান্টিবডি এই ভাইরাসকে চিনে প্রতিহত করে উঠতে পারে না সক্রিয় ভাবে।’ তবে তিনি জানাচ্ছেন, পুরো না হলেও কিছুটা সুরক্ষা মিলবেই।

  • Link to this news (এই সময়)